গর্ভধারণের এই সপ্তাহ অধিক গুরুত্বপূর্ণ কারন এই সময়ে আপনার গর্ভের সন্তানের নানা রকম পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ৬ষ্ঠ সপ্তাহে ultrasound করলে বাচ্চার আকৃতি ধরা পরে। এই সময়ে গর্ভের শিশু সাধারনত ৫-৬ মিলিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। তার নাক, মুখ, কান ধীরে ধীরে আকার নিতে শুরু করে। মাথার আকার তুলনামুলক বড় থাকে এবং তাতে কালো স্পট দেখা যায়, যেখানে বাচ্চার চোখ এবং নাক গঠিত হয়। মাথার দুপাশে খানিকটা চাপা থাকে যেখানে বাচ্চার কান তৈরী হয়। শরীরের দু পাশে কুঁড়ির মত দেখতে কিছু মাংসপিণ্ড দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে হাত এবং পা এ পরিনত হয়।
বাচ্চার হৃদপিণ্ড একটি মাত্র কোষ থেকে বিভাষিত হয়ে চারটি চেম্বার এ ভাগ হয়ে যায়। এ সময় হৃদস্পন্দন মিনিটে ১০০-১৬০ বার শোনা যায় যা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। হৃদপিণ্ড বাচ্চার সারা শরীরে রক্ত প্রবাহিত করে। বাচ্চার অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যায়। এই ছোট্ট ভ্রুণের মধ্যেই যকৃত, কিডনি ও শ্বাসতন্ত্রের গঠন শুরু হয়।
এ সময়ে শিশুটির দেহ কুন্ডলী পাকিয়ে থাকে। এখনো তার মাথার আকৃতি দেহের তুলনায় বড়। সে ছেলে না মেয়ে তা এখনো বোঝা যাবে না। সাধারনত ১৬-১৮ সপ্তাহ নাগাদ আপনি তা জানতে পারবেন।
এ সপ্তাহের শারীরিক পরিবর্তন
গর্ভধারণের এ সপ্তাহে শরীরে অনেক ক্লান্তিবোধ হতে পারে কারন আপনার অনেকটুকু শক্তি গর্ভের শিশুর বিকাশে খরচ হয়।
এই সপ্তাহে আপনার আচরণগত খানিকটা পরির্বতন আসতে পারে যেমন আপনি কখনো হয়ত আবেগপ্রবণ হয়ে উঠতে পারেন আবার কখনো উৎফুল্ল হয়ে উঠতে পারেন। গর্ভধারণের লক্ষনগুলো নিয়েও খানিকটা অস্বস্তিতে ভুগতে পারেন।
আগের সপ্তাহগুলোর চেয়ে বেশী বেশী বমি ভাব, সংবেদনশীলতা এবং মেজাজের পরিবর্তন হতে পারে। গর্ভাবস্হায় শরীরের হরমোনাল পরিবর্তনের কারনেই এমন হয়।
স্তন আগের চাইতে অনেক বেশী sensitive হয়ে উঠতে পারে এবং আকার বৃদ্ধি পেতে পারে।
স্পটিং কিংবা ভ্যাজিনাল ডিসচার্জ এ সময়টাতে খুব স্বাভাবিক যা প্রায় ১৫-২০ শতাংশ মায়েদের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। তবে তা যদি অধিক হয় এবং সাথে ব্যাথা অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ এটা মিসক্যারেজ কিংবা এক্টোপিক প্রেগনান্সির লক্ষনও হতে পারে।
কিছু কিছু মায়েদের মাথা ব্যাথা হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ না করেই কোন ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। এ সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া উচিত। প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়া, হালকা গরম পানিতে গোসল কিংবা মাথা ম্যাসাজ করলে উপকার পাওয়া যায়।
এছারাও বার বার প্রসাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, তলপেটে ব্যাথা কিংবা খাবারে অরুচি সহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এ সপ্তাহে যা করনীয়
এ সময় যেহেতু গর্ভের সন্তানের উল্লেখযোগ্য সব পরিবর্তন সাধিত হয় তাই এখন থেকেই অস্বাস্থ্যকর খাবার পুরোপুরি পরিহার করুন। যেকোনো ধরনের ওষুধ গ্রহনের ব্যাপারে অধিক সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
National Women’s Health Information Center (NWHIC) এর মতানুসারে একজন গর্ভবতী মায়ের দৈনিক অন্তত ০.৪ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড গ্রহন করা উচিত। অনেক খাবারেই ফলিক এসিড পাওয়া যায়। যেমন – সবুজ শাকসবজি, ব্রকলি, লেটুস, সাইট্রাস ফল, কলিজা, বিভিন্ন ডাল, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় দৈনিক অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। কফি, চা কিংবা সোডা জাতীয় পানীয় যত কম সম্ভব অথবা একেবারে না খাওয়াই উচিত।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে অধিক পরিমাণে প্রোটিন, ফলিক এসিড ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। আপনার গর্ভে বেড়ে উঠা শিশুর বৃদ্ধির জন্য এই উপাদানগুলো খুব বেশি প্রয়োজন।
একবারে অনেক বেশি খাবার খেতে চাইলে মায়ের উপরও চাপ পড়বে, তাই খানিক বিরতিতে অল্প অল্প করে খাবার খেতে শুরু করুন, এতে আপনার রুচি নষ্ট হবে না আর খেতেও খানিকটা স্বস্তি পাবেন। ছোট ছোট বিরতিতে ৬ বার কিংবা তাঁর বেশি খাবার খেতে চেষ্টা করুন।
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের শরীরে ভিটামিন ও মিনারেল এর অভাব থাকলে তা শিশুর শরীরেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অতিরিক্ত মিনারেল ও ভিটামিন গ্রহণ করতে পারেন। তবে কখনোই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ ছাড়া তা গ্রহণ করবেন নয়। এছাড়া নিশ্চিত হয়ে নিন আপনি যে ভিটামিন গ্রহণ করছেন সেখানে পর্যাপ্ত পরিমান ফলিক এসিড রয়েছে কিনা।
গর্ভবতী মায়েদের মন প্রফুল্ল থাকলে গর্ভস্থ শিশুর মানসিক বিকাশ সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিক হয়। এ সময় পরিবারের সবার উচিত গর্ভবতী মাকে মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করা।