সপ্তাহ – ৪০

অভিনন্দন! আপনি এখন গর্ভাবস্থার শেষ সপ্তাহে পৌঁছে গেছেন এবং আপনার শিশুর জন্মের জন্য একেবারে প্রস্তুত। এই সপ্তাহে গর্ভাবস্থার সব কিছুই শেষ হতে চলেছে, এবং আপনার শরীর ও শিশুর শরীর এখন একেবারে তৈরি। আর মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা—শিশু পৃথিবীতে আসবে!

শিশুর বিকাশ

  • আকার ও ওজন: এই সপ্তাহে আপনার শিশুর আকার ৫০ সেন্টিমিটার হতে পারে এবং তার ওজন ৩.৫ কেজি বা তার বেশি হতে পারে। শিশুর শারীরিক গঠন সম্পূর্ণ এবং তার শরীরের সব কিছু এখন উন্নত ও পরিপূর্ণ।
  • শিশুর শরীর: শিশুর শরীর এখন শক্ত এবং প্রস্তুত, তার ত্বক মসৃণ এবং গোলাপী হয়ে উঠেছে। তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো কাজ করতে সক্ষম, এবং সে জন্মের পর পৃথিবীতে নতুন জীবন শুরু করতে প্রস্তুত।
  • শিশুর মস্তিষ্ক: শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সম্পূর্ণ হয়েছে, এবং সে পৃথিবীর বাইরের পরিবেশে সাড়া দিতে সক্ষম। তার মস্তিষ্কের নিউরাল কানেকশনগুলি আরও জটিল এবং কার্যকরী হয়ে উঠেছে।
  • শিশুর মুখাবয়ব: শিশুর মুখের গঠন প্রায় সম্পূর্ণ, এবং সে তার মায়ের কণ্ঠ শুনতে সক্ষম। তার চোখ এখন পুরোপুরি বিকশিত এবং সে আলো ও অন্ধকারের পার্থক্য অনুভব করতে পারে।
  • শিশুর হজম ও শ্বাসক্রিয়া: শিশুর হজম এবং শ্বাসক্রিয়া প্রস্তুত। সে জন্মের পর শ্বাস নিতে সক্ষম এবং তার শ্বাসযন্ত্র পুরোপুরি প্রস্তুত।

গর্ভাবস্থার শারীরিক লক্ষণ

  • কনট্রাকশন: আপনি যদি কনট্রাকশন অনুভব করেন, তবে এটি শিশুর জন্মের খুব কাছাকাছি আসার লক্ষণ হতে পারে। কনট্রাকশন যদি নিয়মিত হয়ে যায় এবং ব্যথা বৃদ্ধি পায়, তবে তা প্রসবের সূচনা হতে পারে।
  • পেটের নিচে চাপ: শিশুর মাথা গর্ভাশয়ের নিচে চলে আসার কারণে পেটের নিচে চাপ অনুভব হতে পারে। এটি সাধারণত প্রসবের সময়ের একেবারে প্রস্তুতি হিসেবে ঘটে।
  • পেটের মেদ কমানো: গর্ভাবস্থার এই সময় আপনার শরীরের পেটের মেদ একটু কমে যেতে পারে, কারণ শিশুর জায়গা নিতে গিয়ে গর্ভাশয় সঙ্কুচিত হয়।
  • প্রসবকালীন লক্ষণ: আপনি যদি কোনো পরিবর্তন যেমন পেটের যন্ত্রণা, প্রচণ্ড কনট্রাকশন, বা মূত্রপ্রবাহে পরিবর্তন অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • ফোলাভাব: গর্ভাবস্থার শেষ দিকে শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে যাওয়ার কারণে পায়ের পাতা, হাত, এবং মুখে ফোলাভাব হতে পারে। এটি সাধারণত স্বাভাবিক, তবে যদি অতিরিক্ত হয়, তাহলে ডাক্তারকে জানানো উচিত।

আপনার এবং শিশুর জন্য করণীয়

  1. প্রসবার জন্য প্রস্তুতি:
    • গর্ভাবস্থার শেষ সময়ে এখন আপনার প্রস্তুতি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করুন। হাসপাতাল ব্যাগ প্রস্তুত রাখুন এবং আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
  2. বিশ্রাম এবং শিথিলতা:
    • আপনার শরীর ক্লান্তি অনুভব করতে পারে, তাই নিয়মিত বিশ্রাম নিন এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম থেকে বিরত থাকুন। স্ট্রেস কমানোর জন্য কিছু হালকা শিথিল ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করতে পারেন।
  3. পানির পরিমাণ বজায় রাখুন:
    • প্রসবের সময় শরীর থেকে অনেক পরিমাণে তরল বের হয়ে যেতে পারে, তাই পানি এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য তরল সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করুন।
  4. লক্ষ্য রাখুন কনট্রাকশন:
    • যদি কনট্রাকশন নিয়মিত এবং শক্তিশালী হয়ে যায়, তবে এটি প্রসবের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। আপনি যদি কোনো সমস্যা বা অতিরিক্ত ব্যথা অনুভব করেন, তবে দ্রুত আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  5. ডাক্তারের পরামর্শ:
    • গর্ভাবস্থার এই সময়ের শেষ দিকে যদি আপনি কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ অনুভব করেন, যেমন অতিরিক্ত রক্তপাত বা তরল বের হওয়া, বা শ্বাসকষ্টের অনুভূতি, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

শিশুর জন্মের জন্য প্রস্তুতি

আপনার শিশুর জন্ম এখন খুব কাছাকাছি! সমস্ত প্রস্তুতি নিতে ভুলবেন না:

  • প্রসবের পর প্রথম কিছু ঘণ্টা: আপনার শিশুর জন্মের পর প্রথম কয়েক ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার বা নার্সের সহায়তায় শিশুকে সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করুন। শিশুর জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য সতর্ক থাকুন।
  • সন্তানীর জন্য সঠিক যত্ন: প্রথম দিনগুলোতে শিশুর জন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক যত্ন নিতে হবে। যদি শিশুর বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে পরামর্শ নিন।
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শিশুর জন্মের পর তার প্রথম স্বাস্থ্য পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর শরীরের সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা, তার ওজন এবং অন্যান্য শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হবে।

ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা

  • যদি কনট্রাকশন শুরু হয়ে যায় এবং সময়সীমার মধ্যে না চলে আসে।
  • যদি শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত বা তরল নিঃসরণের লক্ষণ দেখা যায়।
  • যদি শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়।

এ সপ্তাহে, আপনি গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছেন এবং শিশুর জন্মের অপেক্ষা মাত্র কিছুটা সময়ের ব্যাপার। যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিন এবং ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। শুভ প্রসব!