সপ্তাহ – ৩৩

অভিনন্দন! আপনি এখন গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকের প্রায় শেষদিকে চলে এসেছেন। এই সপ্তাহে আপনি আপনার শিশুর আরও শক্তিশালী অনুভূতি ও বিকাশ দেখতে পাবেন। গর্ভাবস্থার শেষ দিকে আসার সাথে সাথে আপনার শরীরে আরও কিছু পরিবর্তন হতে পারে, যা জন্মের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়। এই সময় আপনার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকের দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

শিশুর বিকাশ

  • আকার ও ওজন: শিশুর আকার প্রায় ৪৬ সেন্টিমিটার এবং ওজন ২.২ কেজির কাছাকাছি হতে পারে। সে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে, এবং তার মাংসপেশী আরও সুদৃঢ় হচ্ছে। শিশুর শরীরে চর্বি জমে তাকে শীতের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
  • ফুসফুসের উন্নতি: শিশুর ফুসফুস এখন আরও পরিপূর্ণ হচ্ছে। যদিও এখনও তার শ্বাস-প্রশ্বাসের পুরোপুরি সক্ষমতা তৈরি হয়নি, তবে শ্বাসপ্রক্রিয়া প্রস্তুত হচ্ছে। যদি এই সপ্তাহে শিশুর জন্ম হয়, তবে সে শ্বাস নিতে সক্ষম হতে পারে, তবে কিছু আইসিও ব্যবস্থা প্রয়োজন হতে পারে।
  • দৃষ্টিশক্তির উন্নতি: শিশুর চোখ এখন আরও উন্নত, এবং সে আপনার দিকে তাকিয়ে সাড়া দিতে পারে। তার দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি উন্নত হয়ে গেছে, তবে এখনও কিছুটা ঝাপসা থাকতে পারে।
  • শরীরের অবস্থা: শিশুর শরীরের মাংসপেশী শক্তিশালী হতে শুরু করেছে। সে এখন হাত-পা নেড়ে তার জায়গায় আরও সাড়া দিচ্ছে। শিশুর মাথা এখন আপনার গর্ভের উপরিভাগে রয়েছে এবং গর্ভাশয়ে আরও জায়গা নিলেও সে পূর্ণাঙ্গ বিকাশের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

গর্ভাবস্থার শারীরিক লক্ষণ

  • কোমর ও পিঠে ব্যথা: এই সপ্তাহে আপনি আরও বেশি কোমর ও পিঠে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। আপনার গর্ভাশয়ের আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে পিঠ ও কোমরে চাপ পড়ছে। ব্যথা কমানোর জন্য আপনি আরও বেশি বিশ্রাম নিতে পারেন, এবং সহায়ক পোশাক (যেমন, সাপোর্ট বেল্ট) ব্যবহার করতে পারেন।
  • পায়ের ফোলা: গর্ভাবস্থার শেষের দিকে পায়ের ফোলাভাব বৃদ্ধি পেতে পারে। অতিরিক্ত তরল জমে পায়ের অস্থিরতা ও ফোলাভাব হতে পারে। বিশ্রাম নেওয়া, পা উঁচু করে শোয়ানো এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা এই অবস্থায় সাহায্য করতে পারে।
  • হরমোনের পরিবর্তন: হরমোনের পরিবর্তন আপনার শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করতে পারে, যেমন মানসিক অস্থিরতা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি। তবে চিন্তা করবেন না, এটি প্রাকৃতিক একটি অংশ এবং কিছু দিন পরে এটি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
  • মূত্রাশয়ের চাপ: গর্ভাশয়ের আকার বাড়ার কারণে মূত্রাশয়ে চাপ পড়ছে, ফলে আপনার প্রায়শই প্রস্রাবের বেগ অনুভব হবে। এমনকি রাতে ঘুমাতে গিয়ে ও টয়লেটের জন্য উঠতে হতে পারে।

আপনার এবং শিশুর জন্য করণীয়

  1. বিশ্রাম ও শরীরের যত্ন নিন:
    • গর্ভাবস্থার শেষের দিকে বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। দিনের মধ্যে কিছু সময় বিশ্রাম নিন এবং যদি সম্ভব হয়, ঘুমানোর জন্য একটি আরামদায়ক জায়গা তৈরি করুন।
  2. পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস বজায় রাখুন:
    • প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন ডি শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শাকসবজি, দুধ, মাছ, মাংস, দাল এবং ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস বজায় রাখুন। ফলিক এসিড, ভিটামিন সি, এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গর্ভাবস্থায় শিশুর সুস্থ বিকাশে সহায়ক।
  3. শরীরের ব্যথা কমাতে ব্যায়াম করুন:
    • কোমর ও পিঠের ব্যথা কমাতে হালকা ব্যায়াম যেমন যোগব্যায়াম, স্ট্রেচিং এবং হাঁটা করতে পারেন। তবে, এটি করার আগে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  4. পানির পরিমাণ বজায় রাখুন:
    • গর্ভাবস্থার শেষের দিকে শরীরের পানির চাহিদা বেড়ে যায়। তাই প্রচুর পানি পান করুন এবং শুকনো খাবার বা স্যাল্টি খাবার এড়িয়ে চলুন।
  5. প্রসবের প্রস্তুতি নিন:
    • জন্মের প্রক্রিয়ার জন্য আপনার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করুন। সন্তান জন্মের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুত রাখুন, যেমন শিশুর পোশাক, ডায়াপার, বাচ্চার শীতের কাপড়, এবং স্যানিটারি পণ্য। আপনার হাসপাতাল ব্যাগ প্রস্তুত রাখুন।

ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা

  • যদি আপনি অতিরিক্ত রক্তপাত বা অস্বাভাবিক স্রাব অনুভব করেন।
  • যদি আপনি গর্ভাশয়ে তীব্র বা অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভব করেন।
  • যদি পায়ের ফোলাভাব এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে বিরতি না পান।
  • যদি শ্বাসকষ্ট বা হৃদস্পন্দন অসাধারণ অনুভব করেন।

এই সপ্তাহে আপনি গর্ভাবস্থার শেষের দিকে পৌঁছেছেন, এবং আপনার শিশুর বিকাশ দ্রুত হয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখুন এবং আপনার শরীরের যত্ন নিন। শুভকামনা!