সপ্তাহ – ৩১

এই সপ্তাহে আপনার শিশুর শরীরের বৃদ্ধি আরও তীব্র হবে এবং শারীরবৃত্তীয় উন্নতি ঘটবে। গর্ভাশয়ের ভিতরে শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো কার্যকরভাবে কাজ করছে, এবং সে তার শরীরের মধ্যে আরও অনেক স্নায়ু এবং পেশী গঠন করছে। এই সময়টাতে আপনার শরীরেও কিছু পরিবর্তন ঘটতে শুরু করবে, যা গর্ভাবস্থার শেষ দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

শিশুর বিকাশ

  • আকার ও ওজন: এই সপ্তাহে আপনার শিশুর আকার প্রায় ৪৫ সেন্টিমিটার এবং তার ওজন ১.৮ থেকে ২ কেজি হতে পারে। শিশুর শরীরে তেল বা চর্বি জমতে থাকে, যা তাকে শীতের হাত থেকে রক্ষা করবে এবং শিশুর ত্বক এখন আরও মসৃণ হয়ে উঠছে।
  • শ্বাসযন্ত্রের প্রস্তুতি: শিশুর ফুসফুস আরও উন্নত হচ্ছে, এবং শ্বাসযন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থ (surfactant) উৎপন্ন হচ্ছে। তবে, ফুসফুস এখনও পুরোপুরি পরিপূর্ণ হয়নি। জন্মের পর শ্বাস নিতে শিশুর জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
  • অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা: শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো প্রায় পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করছে। শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র আরও উন্নত হচ্ছে, এবং সে বিভিন্ন পরিবেশগত পরিবর্তন যেমন আলোর তীব্রতা, শব্দ, এবং তার মা বা বাবা-মায়ের স্পর্শ অনুভব করতে পারে।

গর্ভাবস্থার শারীরিক লক্ষণ

  • গর্ভাশয়ের চাপ: আপনার গর্ভাশয় এখন আরও বড় হয়ে উঠছে এবং আপনার পেটের অংশে চাপ অনুভব হতে পারে। এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকের একটি পরিচিত লক্ষণ।
  • কোমর ও পিঠের ব্যথা: গর্ভাবস্থার শেষের দিকে পিঠের ব্যথা এবং কোমরের চাপ আরও বেশি হতে পারে। এটি আপনার শরীরের ভারসাম্য পরিবর্তনের কারণে হতে পারে। নিয়মিত স্ট্রেচিং ও হালকা ব্যায়াম সাহায্য করতে পারে।
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি: গর্ভাশয়ের আকার আরও বড় হয়ে গেলে তা মূত্রথলির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে প্রস্রাবের তীব্রতা বাড়তে পারে। এই অবস্থায় প্রয়োজন হলে বিশ্রাম নিন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
  • ক্লান্তি ও অস্থিরতা: তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শেষদিকে ক্লান্তি এবং অস্থিরতার অনুভূতি বাড়তে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং হালকা ব্যায়াম আপনার শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে।

আপনার এবং শিশুর জন্য করণীয়

  1. প্রস্রাবের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
    • গর্ভাবস্থায় মূত্রথলির ওপর চাপ কমাতে খেয়াল রাখুন। ঘন ঘন প্রস্রাবের জন্য যথাযথ বিশ্রাম এবং পরিমিত পানি পান করা প্রয়োজন।
  2. পুষ্টি নিশ্চিত করুন:
    • শিশুর জন্য সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে আপনার খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং আয়রন অন্তর্ভুক্ত করুন। দুধ, শাকসবজি, ফল, মাংস এবং ডাল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
  3. বিশ্রাম ও শারীরিক বিশ্রাম:
    • গর্ভকালীন ক্লান্তি কাটাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং হালকা ব্যায়াম করুন। ঘুমের সময় নিশ্চিত করুন যাতে আপনার শরীর পূর্ণ বিশ্রাম পায়।
  4. মায়ের প্রস্তুতি:
    • গর্ভাবস্থার শেষের দিকে প্রসবের পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন পোশাক, বিছানা প্রস্তুত রাখুন।
  5. শিশুর সাথে যোগাযোগ:
    • আপনার শিশুর সাথে আরও যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করুন। কথা বলুন, গান শুনান বা হালকা স্পর্শ করুন, এতে শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের উন্নতি ঘটবে এবং তার মনের মধ্যে পরিচিতি তৈরি হবে।

ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা

  • যদি আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয় বা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন।
  • যদি পেটের নিচের অংশে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়।
  • যদি কোনো অস্বাভাবিক স্রাব বা রক্তপাত হয়।
  • যদি ফোলাভাব অত্যধিক হয়ে যায় বা পায়ের তলায় টান অনুভব হয়।

এটা গর্ভাবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং আপনার শিশুর বিকাশ ত্বরান্বিত হচ্ছে। আপনার শরীরের পরিবর্তনগুলো অনুভব করুন, এবং প্রয়োজনীয় যত্ন ও পরামর্শ নিন। আপনি ও আপনার শিশুর জন্য শুভ কামনা!