সপ্তাহ – ২৬

অভিনন্দন! আপনি গর্ভাবস্থার ২৬তম সপ্তাহে পৌঁছেছেন। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহ, কারণ আপনার শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নতুন একটি পর্যায়ে প্রবেশ করছে। আপনার এবং শিশুর জন্য এই সপ্তাহটি হবে একেবারে নতুন অভিজ্ঞতার শুরু।

শিশুর বিকাশ

  • শরীরের আকার ও ওজন: এখন আপনার শিশুর আকার প্রায় ৩৪-৩৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। এটি একটি ছোট শসার আকারে পরিণত হয়েছে। শিশুর শরীরের তুলনায় মস্তিষ্কের আকার তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এটি তার চিন্তা, অনুভূতি এবং পরিবেশের প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি করবে।
  • দৃষ্টি ও শ্রবণ: আপনার শিশুর দৃষ্টি কিছুটা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। যদিও শিশুর চোখ এখনও পুরোপুরি ভ্রূণিক অবস্থা থেকে উন্নীত হয়নি, তবুও সে আলো-আঁধারি এবং কিছু অতি সাধারণ গতি অনুভব করতে পারে। শিশুটি শোনার ক্ষমতাও উন্নত হচ্ছে এবং সে আপনার কণ্ঠ শুনতে পছন্দ করবে! শিশুর মাথায় এখন চুলের গোড়াও তৈরি হচ্ছে এবং ত্বক আরও স্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
  • শ্বাসযন্ত্র ও হৃদযন্ত্র: শিশুর শ্বাসযন্ত্রের উন্নতি হচ্ছে এবং ফুসফুসের ভেতর ছোট ছোট আলভিওলি তৈরি হচ্ছে। যদিও শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস এখনও সম্পূর্ণ কার্যকরী হয়নি, তবে তার শরীর এখন একেবারে প্রস্তুত, যেন জন্মের পর পৃথিবীতে শ্বাস নিতে পারে। শিশুর হৃদযন্ত্রের গতির সাথে সাথে এই সপ্তাহে এটি আরও দৃঢ় হয়ে উঠছে।
  • চর্বির জমা: শিশুর শরীরে আরও বেশি চর্বি জমছে, এবং এটি শিশুর শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। এই সপ্তাহে শিশুর চামড়া আরও মসৃণ হয়ে উঠবে এবং তার শরীরের শিরাগুলি স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।

গর্ভাবস্থার শারীরিক লক্ষণ

  • পেটের টান বা ব্যথা: আপনার গর্ভাশয় আরও বড় হয়ে উঠছে এবং পেটের চারপাশে কিছুটা টান অনুভূত হতে পারে। এটি অনেকটা পেশীর প্রসারণের মতো, যা কিছুটা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তবে, যদি ব্যথা সহ্যযোগ্য না হয় বা আরো তীব্র হয়ে থাকে, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • মুখে রুচির পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় মুখে স্বাদ বা রুচির পরিবর্তন ঘটতে পারে। কিছু সময় তেতো বা অস্বাভাবিক স্বাদও হতে পারে, যা আপনার খাওয়ার অভ্যাসে প্রভাব ফেলতে পারে। আপনি যদি কিছু বিশেষ খাবারের প্রতি আগ্রহী হন বা বমি বমি ভাব অনুভব করেন, তবে এটি স্বাভাবিক। তবে অতিরিক্ত রুচির পরিবর্তন অনুভব হলে একজন ডাক্তারকে পরামর্শ দিন।
  • ব্লাড প্রেসার ও স্বাস্থ্যের মনিটরিং: গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কিছুটা বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে এই সময়ের পর। এর ফলে মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা বা হাত-পায়ে ফুলে যাওয়ার মত লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • শরীরের তাপমাত্রা: গর্ভাবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায়। তাই পর্যাপ্ত পানি পান এবং ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন। শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আপনার এবং শিশুর জন্য করণীয়

  1. প্রাণবন্ত খাদ্যাভ্যাস:
    • ফল ও শাকসবজি: এই সময়ে আপনার শরীরে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস প্রয়োজন। তাই বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাকসবজি খান, বিশেষ করে গাজর, পালং শাক, আপেল, কলা এবং জাম্বুরা।
    • লৌহ ও ক্যালসিয়াম: লৌহের অভাব থেকে রক্তস্বল্পতা হতে পারে, তাই মাংস, মাছ, ডাল, শিম, এবং পাঁঠার মাংস খান। এর সাথে দুধ, পনির এবং দইয়ের মতো ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারও খাওয়া উচিত।
  2. ব্যায়াম ও শারীরিক যত্ন:
    • লাইট এক্সারসাইজ: এই সপ্তাহে অতিরিক্ত ভারী ব্যায়াম না করলেও, কিছু লাইট এক্সারসাইজ বা হাঁটাহাঁটি উপকারী হতে পারে। এটি আপনার পেশীগুলিকে শক্তিশালী রাখবে এবং গর্ভকালীন নানা সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে।
    • যোগব্যায়াম ও প্রসারিত করা: সহজ যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং আপনার শরীরকে নমনীয় এবং শান্ত রাখবে। পায়ের গোড়ালি থেকে শুরু করে কোমর পর্যন্ত ব্যায়াম করুন, এতে স্বস্তি পাবেন।
  3. সুস্থ মন ও মানসিক শান্তি:
    • মনে শান্তি বজায় রাখা: গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ অত্যন্ত সাধারণ। যদি আপনি মানসিকভাবে চাপ অনুভব করেন, তবে এটি আপনার শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ধীরে ধীরে শ্বাস নিন, মিউজিক শুনুন, বা প্রিয় বই পড়ুন। এই ধরনের ছোট উদ্যোগ মানসিক শান্তি আনতে সাহায্য করবে।
  4. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম:
    • গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন হয়, তাই আপনি রাতে ভালোভাবে বিশ্রাম নিতে চেষ্টা করুন। আপনার পেট ও কোমরের জন্য সঠিক অবস্থানে শুয়ে ঘুমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিলো ব্যবহার করে পাশে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা

  • যদি আপনার চোখে ঝাপসা দেখা যায় বা মাথা ঘুরে যায়।
  • যদি আপনার পেটের ব্যথা অত্যন্ত তীব্র হয় এবং স্থায়ী হয়।
  • যদি হাত-পায়ে ফোলাভাব বেড়ে যায় বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অনুভব করেন।
  • শ্বাসকষ্ট বা বমি হওয়ার মতো সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

আপনার গর্ভাবস্থার সময় প্রতিটি সপ্তাহ নতুন কিছু শিখার এবং বেড়ে ওঠার সময়। এই সপ্তাহে আপনার শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের সাথে সাথে আপনি আরও কিছু নতুন শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন অনুভব করবেন। নিজের যত্ন নিন এবং আগামী সপ্তাহে নতুন তথ্য নিয়ে আবার ফিরে আসব!