সতেরোতম সপ্তাহ থেকে গর্ভের শিশুটির বৃদ্ধি দ্রুততর হতে থাকবে। মাঝারি আকারের মূলার দৈর্ঘ্যের শিশুটি এখন বিগত সপ্তাহের চেয়ে যথেষ্ট বড় হবে এবং তার মাথা ও শরীরের অনুপাতও এখন সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখন আর শিশুটিকে দেখে ‘অতিকায় মাথা’র জীব বলে মনে হবে না।
শিশুটির তরুনাস্থিগুলো এখন ক্যালসিয়াম দ্বারা পূর্ন হতে শুরু করবে এবং নতুন হাড়ও গঠিত হতে থাকবে।
নতুন করে তৈরি হওয়া হাড়গুলোর ওপরে পেশী ও চর্বির স্তরও বসতে শুরু করবে। তাপ সঞ্চালনের মাধ্যমে শিশুর দেহকে উষ্ণ রাখার জন্য এই চর্বির স্তর অনেক গুরুত্বপূর্ন।
শিশুটির ত্বক এখনো বেশ স্বচ্ছ থাকবে এবং তার রক্তনালীগুলোও স্পষ্ট দেখা যাবে। বর্ধিষ্ণু শিশুটির প্রয়োজনীয় সমর্থন যোগানের জন্য নাভিরজ্জু আরো পুরু ও শক্ত হয়ে উঠবে।
১৭ সপ্তাহে শিশু কেমন হয়?
শিশুটির কঙ্কাল ধীরে ধীরে নরম তরুণাস্থি (Cartilage) থেকে শক্ত হাড়ে পরিনত হতে থাকবে এবং নাভিরজ্জু (Umblical Cord) শক্ত ও ঘন হয়ে উঠবে। শিশুটির ওজন এখন ১৪০ গ্রাম এর মত এবং লম্বায় প্রায় ৫ ইঞ্চি। এ সময় থেকেই শিশুর নিজস্ব আঙ্গুলের ছাপ গঠিত হতে থাকে। এখন শিশুর হৃদপিণ্ড তার মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রন করে। হৃদপিণ্ডের গতি মিনিটে ১৪০-১৫০ বার যা আপনার চাইতে দ্বিগুণ।
এ সপ্তাহে শারীরিক পরিবর্তন
এখন থেকে একটানা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকাটা আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে আপনার পায়ের শিরাগুলো বেশ স্পষ্ট বোঝা যাবে। শিশুটির আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার শরীরের ভর কেন্দ্রেও পরিবর্তন আসবে এবং আপনার বর্ধিত ওজনের ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা হবে। সমান তলা বিশিষ্ট জুতা পরার চেষ্টা করুন এবং যখনই মনে হবে কোনোভাবে দাঁড়ালে বা বসলে আপনি ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে পারেন, তাহলে সেটা না করুন।
আপনার জন্য যদি গর্ভধারণের অভিজ্ঞতা নতুন হয় তাহলে জেনে রাখুন যে এসময় গর্ভের শিশুর নড়াচড়ার কারণে আপনার পেটের মধ্যে বুদবুদ ওঠার মতো বা ভেতরে কোনো কিছু ওড়ার মতো অনুভূতি হতে পারে, গ্যাস বা বদহজমের কারণে কখনো কখনো যেমনটা হয়। আপনার মনে হতে পারে যে পেটের ভেতর হয়তো একটা প্রজাপতি ঢুকে গেছে আর ক্রমাগত উড়ছে। ১৭-১৮ সপ্তাহ নাগাদই সাধারণত গর্ভের শিশুর নড়াচড়া টের পাওয়া যায়।
আপনার পেট ও বুকের মাঝামাঝি এসময় থেকে কালো দাগ দেখা দিতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক, কারণ আপনার ক্রমবর্ধিষ্ণু শিশুকে জায়গা করে দেয়ার জন্যই আপনার পেটও বিস্তৃত হচ্ছে। পেট বড় হয়ে যাবার কারণে চামড়ায় টান পড়বে আর কিঞ্চিত চুলকানোর মতো অনুভূতিও হতে পারে। এসময় থেকেই বাদাম তেল অথবা অ্যান্টি-স্ট্রেচ মার্ক ক্রিম (Anti-Strech Mark Cream) ব্যবহার করতে শুরু করুন যাতে চামড়ার আর্দ্রতা বজায় থাকে।
গর্ভাবস্থায় আপনার কোমর ও নিতম্বের চামড়ায় দাগ পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। এসময় থেকে আপনার চুল পড়ার হার কমে যাবে। ফলে, আপনার চুল আরো ঘন আর উজ্জ্বল দেখাবে। এসবই কিন্তু হরমোনের কল্যাণ!
যেহেতু এখন শরীরে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যাবে, আপনার গরম লাগার অনুভূতিও বেশি হবে।
এই সপ্তাহে আপনার করনীয় কি?
যেহেতু এখন ক্রমাগত বড় হতে থাকা জরায়ুকে জায়গা করে দেয়ার জন্য আপনার পেশী এবং লিগামেন্টগুলোতে টান বাড়বে, আপনি সামান্য ব্যথা অনুভব করতে পারেন। যদি আপনি এখনো ব্যায়াম শুরু না করেন, তাহলে এ পর্যায়ে এসে এক-আধটু ব্যায়াম করতে পারেন। এতে করে আপনার পেশী সবল থাকবে। তবে হ্যাঁ, সক্রিয় থাকতে পারা যেমন ভালো, তেমনি আপনাকে এটাও জানতে হবে যে কতটুকু পর্যন্ত আপনি শরীরকে পরিশ্রম করাতে পারবেন।
পায়ে ব্যথা থাকলে এসময় একটি বিশেষ ধরনের জুতা আছে, যা ব্যাথা কমাতে কার্যকর। দিনের বিভিন্ন সময়ে কাজের ফাঁকে পায়ের বিশ্রাম দিন। কিছুক্ষন পর পর পায়ের উপর চাপ কমাতে, পা ঝুলিয়ে বসুন। তবে কখনোই খুব বেশী শুয়ে বা বসে থাকা যাবে না, এতে করে পায়ে পানি চলে আসতে পারে।
এই সপ্তাহে আপনার জন্য পরামর্শ:
এইসময় আপনি পড়ে গেলে সেটা আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। ব্যায়াম করার সময় আপনার সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে কারণ অসাবধানতার কারণে আপনার পেশীতে টান লেগে যেতে পারে। মাথা ঘুরে যাওয়া বা অঞ্জান হয়ে যাওয়া এড়াতে আপনি শায়িত অবস্থা থেকে ওঠার সময় বা বসা থেকে দাঁড়ানোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।