গর্ভধারণের এ সপ্তাহে এসে গর্ভের শিশুটির আকার তুলনা করা যেতে পারে একটি পেয়ারার সাথে এবং এখন থেকে প্রতি সপ্তাহেই শিশুটি দ্বিগুণ হারে বাড়বে। যদিও এখনো শিশুটির চোখের পাতা খুলবেনা , তার মধ্যেও তার ভ্রু এবং চোখের পাতার লোম ঠিকই গঠিত হয়ে যাবে। শিশুটির শ্রবণযন্ত্রের কাঠামো এবং স্বাদগ্রাহী গ্রন্থিগুলোও এ সপ্তাহ নাগাদ সুগঠিত হয়ে যাবে। শিশুর পা এখন অনেক সুগঠিত।
১৬ সপ্তাহে শিশু কেমন হয়?
তার হৃদপিণ্ড এখন প্রতিদিন প্রায় ২৩ লিটার রক্ত পাম্প করে যা শিশুর বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকবে। যদি শিশুটিকে এখন দেখা যেত তাহলে দেখা যেত সে বিভিন্ন ধরনের মুখভঙ্গি করছে। যদিও সে এখনও তার মুখের মাংসপেশি গুলো নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা।
গর্ভের শিশু এ সময় শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে সাথে নাক ও মুখ দিয়ে অ্যামনিওটিক তরল (Amniotic Fluid) ভেতরে গ্রহণ করবে আবার বেরও করে দেবে। চক্রাকারে এই ক্রিয়া চলতেই থাকবে।
গর্ভের ভেতর নড়াচড়া করতে করতে সে নাভিরজ্জুর (Umbilical Chord) সংস্পর্শে আসলে সেটাকে দুইহাতে মুঠো করে ধরে রাখবে। এতে আপনার দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। আপনি যদি ভাবেন যে এভাবে নাভিরজ্জু ধরে রাখার কারণে প্রয়োজনীয় রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, তাহলে এটাও জেনে রাখুন যে সেরকম কিছু হবার আগেই শিশুটি নিজেই নাভিরজ্জুটি ছেড়ে দেবে। শিশুর ওজন এখন ৭৯ গ্রাম এর মত এবং উচ্চতা প্রায় ৪.৫ ইঞ্চি।
গর্ভধারণের ১৬ সপ্তাহে আপনি
এখন আপনি খেয়াল করবেন যে গর্ভের শিশুটির অবস্থান যত উপরে উঠছে, আপনার পেটের ফোলা ভাবও ততই বাড়ছে। বিগত কয়েকমাস গর্ভস্থ শিশুটির নিচের দিকে অবস্থানের কারণে মূত্রথলিতে বেশি চাপ পড়েছে এবং আপনার মূত্রের বেগও নিশ্চয়ই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ছিলো। এখন থেকে সেটা বেশ অনেকটাই কমে আসবে, কারণ এখন মুত্রথলির ওপর চাপও কমে যাবে।
মূত্রত্যাগের সময় যদি জ্বালা-পোড়া করে তাহলে ডাক্তার দেখানো জরুরি। গর্ভাবস্থায় অনেক মেয়েরই ইউরিনারি ইনফেকশন (Urinary Infection) হয় এবং তার যথাযথ চিকিৎসা না হলে বৃক্কের (Kidney) ক্ষতি হতে পারে। এই সপ্তাহেও যদি আপনি শিশুর নড়াচড়া অনুভব করতে না পারেন, তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সামনে এমন সময়ও আসবে যখন শিশুটি ক্রমাগতই আপনার পেটের ভেতর থেকে লাথি আর ঘুষি মেরে তার অস্তিত্বের কথা আপনাকে জানান দিয়েই যাবে।
এ সময় যোনিপথের স্রাবের নিঃসরণ আরও বেড়ে যেতে পারে। স্বাভাবিক স্রাব দুধ সাদা আর স্বচ্ছ হবে। যদি স্রাব গন্ধযুক্ত না হয় আর যোনিপথে না চুলকায় তাহলে স্রাবের পরিমাণ বা প্রকার নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই।
এ সময় আপনার নখ অনেক দ্রুত বাড়বে। স্বাভাবিক সময়ের চাইতে এ সময় চুলের বৃদ্ধিও দ্রুত হবে। আপনার ত্বকও এখন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে থাকবে। এবার অন্তত হরমোনের পরিবর্তনকে ধন্যবাদ দেবার সময় হলো!
তবে এ সময় কিন্তু সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি থাকবে যা আপনার গর্ভের শিশুকেও সংক্রমিত করতে পারে। যদি আপনি পরিকল্পিতভাবে গর্ভধারণ করে থাকেন তাহলে আপনার ডাক্তার নিশ্চয়ই গর্ভধারণের আগেই আপনার শরীরকে সংক্রমণমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। গর্ভবতী মা যদি হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B) ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হন, তাহলে সেই ভাইরাস গর্ভস্থ শিশুর শরীরেও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের ভাব এখনই দূর হয়ে যাবে না। এ সময় প্রচুর পানি খাওয়া আপনার জন্য উপকারী হবে। এতে করে মূত্রনালির কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে তাও কমে যাবে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কিভাবে নিরাময় করবেন বা সেসময় কি কি করা উচিত সে সম্পর্কে আমাদের নিবন্ধ থেকে জেনে নিন।
ষষ্ঠদশ সপ্তাহের জন্য পরামর্শ
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, আপনি আপনার শিশুর নড়াচড়া বোধ করতে শুরু করবেন। এটা প্রথম প্রথম একটি গ্যাসীয় বুদবুদ বা সূক্ষ্ম দাপাদাপির মতো মনে হবে কিন্তু একবার নিয়মিতভাবে ঘটতে শুরু করলে আপনি বুঝতে পারবেন যে এটি আপনার শিশুর চালনের জন্যই হচ্ছে। আপনার ক্রমবর্ধমান শিশুর ভারবহন করার জন্য আপনার বর্ধিত রক্তের ভলিউমের ফলে হয়ত আপনার নাক থেকে রক্ত ঝরছে বা আপনার পায়ের শিরা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।
গর্ভাবস্থায় আপনি আপনার ওজন বৃদ্ধি কোনভাবেই নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন না এবং আপনাকে আপনার শরীর নতুন আকৃতি আলিঙ্গন করতে হবে এবং প্রতি কিলো ওজন বৃদ্ধি যে আপনার ও আপনার শিশুর ভালো স্বাস্থ্যের প্রতীক সেটা মনে রাখার চেষ্টা করবেন। গর্ভাবস্থায় যতদিন আপনি সঠিক খাওয়া–দাওয়া করছেন এবং নিয়মিত ব্যায়ামকরছেন, জেনে রাখবেন যে পরবর্তিকালে এটা আপনারই উপকার করবে।
এই সপ্তাহের জন্য যত্ন
আপনার পায়ের শিরা যদি স্ফীত হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে আপনি স্টকিংস পরতে পারেন, আপনার পা যতটা সম্ভব তুলে রাখার চেষ্টা করুন এবং যখনই সম্ভব ব্যায়াম করুন যাতে রক্ত প্রবাহ উন্নত হয়। আপনার দিন শুরু করুন একটি পুষ্টিকর ব্রেকফাস্ট দিয়ে যাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন, শর্করা, ফাইবার, এবং অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার আছে।
সবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন মাংস, ও কম চর্বির দুগ্ধজাত খাবার খান এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্যাকেটজাত খাবার, এবং অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
সবশেষে মনে রাখা উচিত, গর্ভবতী মাকে সব সময় হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তী কালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত।