আবারও সতেজ অনুভব করতে পেরে ভালো লাগছে? এই সতেজ থাকার সময়টুকু যতটুকু সম্ভব উপভোগ করে নিন। দোকানে যান, নতুন কাপড় – চোপড় কিনুন। এখনকার সাইজের কাপড়গুলো তো কিছুদিন পরেই আর গায়ে আঁটবে না। খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস যদি স্বাভাবিক হয়ে আসে, তাহলে বিভিন্ন রকম খাবার খেতে শুরু করুন। এতে করে শিশুটির জন্মের পর বুকের দুধ ছাড়িয়ে যখন তাকে শক্ত খাবার খাওয়াতে শুরু করবেন, সে সহজেই সেগুলো গ্রহণ করবে।
১৫ সপ্তাহে শিশু কেমন হয়?
গর্ভাবস্থা এর এই সপ্তাহে বাচ্চা ৯-১০ সে. মি. লম্বা হয় ও ওজন ১০০ গ্রামের মত হয়। বাচ্চার ত্বক খুবই পাতলা হয় এবং চুল উঠতে শুরু করে। কমলালেবুর আকার ধারণ করা গর্ভস্থ শিশুটি এ সপ্তাহে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠবে। মাঝে মাঝে সে একটু ঘুমিয়ে নেবে। তারপর শক্তি পুনরুদ্ধার হয়ে গেলে বাকিটা সময় সে ক্রমাগত হাতপা নাড়বে।
তার ইন্দ্রিয়গুলো এখন বিগত সপ্তাহের চাইতেও শক্তিশালী। শিশুটির অন্তঃকর্ণ ও ইতিমধ্যে গঠিত হয়ে যাবে। ফলে, আপনি যদি এখন তাকে গান শোনান, সে স্পষ্টই শুনতে পাবে। তার দৃষ্টিও বেশ ভালোভাবেই বিকশিত হয়ে যাবে এ সপ্তাহ নাগাদ। আপনি যদি শিশুটির অবস্থান অনুযায়ী পেটের ওপর আলো ফেলেন, তাহলে সে আলোর উৎস থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবে।
১৫ সপ্তাহে মায়ের কিছু লক্ষণ
এখন শরীরে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যাবে, আপনার গরম লাগার অনুভূতিও বেশি হবে। এ সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। কারো কারো নাক বন্ধ হয়ে যায়। খাওয়ার পর পরই বুক জ্বালা-পোড়া করা বা বদহজমের সমস্যা হতে পারে এবং পেট ফুলে যেতে পারে। এসময় অনেকের মাড়ি ফুলে যাওয়ার সমস্যাও হয়ে থাকে, ফলে দাঁত ও মাড়ির যত্ন নেয়া জরুরি।
এ সপ্তাহে শারীরিক পরিবর্তন
এসময় নতুন যে সমস্যায় আপনি ভুগতে পারেন তা হলো সবকিছু ভুলে যাওয়া। তা যদি হয়েই থাকে, তাহলে সব দোষ হরমোনের! আপনি হয়তো চাবি কোথায় রেখছেন ভুলে যেতে পারেন, কিংবা ডাক্তারের সাথে যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে সেইটাই হয়তো আপনার মনে থাকবে না। কিন্তু, তার মানে কিন্তু এই না যে আপনি আলঝেইমারের মতো কোনো স্মৃতিবিনাশী রোগে আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন। এ সবই হরমোনের খেলা।
একটা ডায়রিতে সবকিছু লিখে রাখতে পারেন, কিংবা অ্যালার্মও দিয়ে রাখতে পারেন। গর্ভাবস্থায় সবকিছু ভুলে যাওয়ার এই উপসর্গটিকে বলা হয় প্রেগনেন্সি অ্যামনেশিয়া (Pregnancy Amnesia). গর্ভাবস্থার কিছু সময় পর পর্যন্ত এই অবস্থা থাকবে, তারপর হরমোনের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসলে এই উপসর্গও দূর হয়ে যাবে। এসময় থেকেই সাধারণত আপনি যে মাপের অন্তর্বাস পরেন সেটা আর মাপসই মনে হবে না।
আপনি আরও খেয়াল করবেন যে আপনার স্তনবৃন্তের চারপাশ গাঢ় বর্ণ ধারণ করছে। স্তনদ্বয় আরও ভারী, অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে উঠবে এবং ফোলাভাব ও ব্যথার অনুভূতিও বাড়বে। আগে থেকেই এগুলো সম্পর্কে জেনে রাখুন যাতে হঠাৎ এরকম পরিবর্তনে চমকে না যেতে হয়।
দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অনুভূতি হচ্ছে?
গর্ভাবস্থায় দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অনুভূতি খুব স্বাভাবিক ঘটনা।
আপনার ক্রমশ স্ফীত হতে থাকা পেট ডায়াফ্রামকে (পেট ও বুকের মাঝখানের পর্দা) চাপ দেয় বলেই এমন হয়।
শরীরের metabolism বেড়ে যাওয়ার কারনে এসময় শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে শরীর গরম থাকতে পারে এবং অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
এই সপ্তাহের জন্য যত্ন
এখন আপনি আপনার বাম পাশে ঘুমোনোর অভ্যাস শুরু করুন – এতে আপনার সঞ্চালন উন্নত হবে। আপনি আপনার পিছনে এবং আপনার পায়ে মধ্যে বালিশ গুঁজে ঘুমোনোর চেষ্টাও করতে পারেন। অনেক ধরণের ‘প্রেগনেন্সি পিলো’ আছে যা আপনার সমগ্র শরীরের ভারবহন করতে সক্ষম। গর্ভাবস্থায় ভাল করে খাওয়াদাওয়া করা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আপনার শিশুকে অত্যাবশ্যক পুষ্টি প্রদান করে এবং আপনাকেও শক্তি দেয়।
তাই খাওয়ার সময় মনে রাখবেন আপনি এখন সত্যিই দুইজনের জন্য খাচ্ছেন। একটি সুষম গর্ভাবস্থা জন্য আপনার খাদ্যে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, দুগ্ধ এবং ফল ও সবজি, সেইসাথে প্রচুর পরিমাণে তরল অন্তর্ভুক্ত করুন, এতে আপনার শিশুর পুষ্টি সম্পূর্ণ হবে।
এই সপ্তাহে আপনার জন্য পরামর্শ
আপনার জরায়ু এখন আপনার নাভির প্রায় ৩–৪ ইঞ্চি নিচে থেকে অনুভূত হতে পারে। আগামী পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে কোয়্যাড্রুপল মার্কার স্ক্রীনিং টেস্ট নামক একটি রক্ত পরীক্ষা করার জন্য বলা হতে পারে যার সাহায্যে ডাউন সিন্ড্রোমের নির্ণয় করা যায়। এছাড়াও এখন থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে অ্যামনিয়োসেনটেসিস নামক পরীক্ষার জন্য বলা হতে পারে।
এখন আপনার নাক থেকে রক্ত পড়া এবং সাইনাসের ব্যথায় ভুগতে হতে পারে। চিন্তা করবেন না, আপনার নাক এবং সাইনাস এই অস্বস্তির কারণ হলো আপনার শরীরে রক্ত প্রবাহের বৃদ্ধি। কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সে জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। দিনে অন্তত আট গ্লাস পানি পান করতে হবে। আঁশ আছে এ রকম খাবার, যেমন- শাকসবজি, ফলমূল, বিচিজাতীয় খাবার, ডাল, আটা ইত্যাদি খেতে হবে।
সময় কাটানোর অংশ হিসেবে বাচ্চার নাম এখন থেকেই খুজতে পারেন।
মাকে সবসময় পরিবারের সদস্যদের মানসিকভাবে সাহস দিতে হবে। কোনভাবেই তাকে ভয়ের কোন কথা বলে ভড়কে দেওয়া যাবেনা।একজন মা ও তার পরিবারের সঠিক প্রস্তুতি ও মানসিক সাহসই একটি সুস্থ, সুন্দর ও সবল শিশুর জন্ম দিতে পারে।