এগার সপ্তাহ পার হওয়া মানে আপনি প্রথম ট্রাইমিষ্টারের শেষদিকে চলে এসেছেন। শারীরিক-মানসিক পরিবর্তনগুলো খুব দ্রুতগতিতে ঘটছে। তবে এসময় বেশকিছু হরমোনগত পরিবর্তন স্তিমিত হয়ে আসে। যেমন অনেকের প্রচন্ড বমি, খাবারে অরুচি কমে আসে। না হলেও এই সময়ে এসে শরীর অনেকটা অভ্যস্থ হয়ে পড়ে এগুলোর সাথে। এতদিন হয়ত হবু মাকে দেখে প্রেগন্যান্ট মনে হতো না, এখন থেকে আস্তে আস্তে শারীরিক পরিবর্তনগুলো বাইরে থেকে বুঝতে পারা শুরু হবে।
১২ সপ্তাহে শিশু কেমন হয়?
এই সপ্তাহে আপনার শিশুর পায়ের আঙুল থেকে দাঁত – শরীরের সমস্ত অংশ ক্রমশঃ বাড়তে থাকবে। সে আগামী দিনগুলিতেও এইভাবে বাড়তে থাকবে, বড় হতে থাকবে এবং শক্তি সঞ্চয় করতে থাকবে। এই সপ্তাহের শেষের দিকে আপনার গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। তার দৈর্ঘ্য এখন প্রায় ৩ ইঞ্চি (গোড়ালি থেকে মাথার পরিমাপ) এবং ওজন প্রায় ১৪.১৭ গ্রাম।
বাচ্চা এরই মধ্যে হাত ও পায়ের পাতা নাড়ানো শুরু করছে। কিন্তু এখনো আপনি এর নাড়াচাডা অনুভব করতে পারবেন না। আকারে ছোট হলেও, এটি এখন একটা পূর্নাঙ্গ মানবশিশুর ক্ষুদে প্রতিরুপ।
ইতিমধ্যে প্রথম ট্রাইমিষ্টারের আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়ে থাকলে, বাচ্চার হার্টবিট, গ্রোথ এগুলো সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা পাওয়ার কথা। তবে ভ্রুনটি মেয়ে নাকি ছেলে সেটা বোঝানোর জন্য প্রায় ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
আপনার শরীরে যে পরিবর্তন আসবে
জরায়ুর বৃদ্ধি: বাড়ন্ত শিশুকে জায়গা দিতে জরায়ু এরই মধ্যে আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বড় হয়েছে। আপনি তলপেটে এখন তা অনুভব করতে পারবেন। আর এই বাড়ন্ত জরায়ুকে জায়গা করে দিতে কোমর আস্তে আস্তে প্রশস্ত হওয়া শুরু করেছে।
মাথাব্যাথাঃ আপনি হয়তো আগে কখনোই মাথাব্যাথায় কাবু হননি। হরমোনের উঠা-নামা, ক্লান্তি, রাতে ভালো ঘুম না হওয়া, স্ট্রেস এসব থেকে এখন মাথা ধরা স্বাভাবিক। ভালো মতো খেয়াল করুন ঠিক কোন কারনে মাথাব্যাথা হচ্চে বলে আপনি মনে করছেন, সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
অতিরিক্ত ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জঃ এসময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী ভ্যাজানাল ডিসচার্জ হয় অনেকেরই। সাদা স্বচ্ছ ডিসচার্জ স্বাভাবিক। এইধরনের ডিসচার্জ ভ্যাজাইনার ইনফেকশন প্রতিরোধ করে। কিন্তু যদি সাদা ছাড়া অন্য কোন রঙয়ের ডিসচার্জ হয়, যেমন কালচে, লাল, সবুজ কিংবা গোলাপী, অতিসত্ত্বর ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
ক্লান্তিঃ সারাদিন কিংবা প্রায় সময় ক্লান্ত লাগা স্বাভাবিক। হয়ত পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরও আপনার ক্লান্ত লাগছে। ভ্রুনের বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্লান্তিভাবও বাড়তে পারে। বিশেষ করে যদি জময বাচ্চা হয়, প্রায়শই ক্লান্ত বোধ করতে পারেন।
এই সপ্তাহে আপনার জন্য টিপস
- ইতিমধ্যে আপনার প্রিয়জনদের গর্ভধারনের খবর না জানিয়ে থাকলে, এখন জানাতে পারেন।
- স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স সবসময় হাতের কাছে রাখুন। বাড়ীর বাইরে গেলে ব্যাগে নিয়ে নিন।
- পানি খান প্রচুর। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, শাকসবজি-ফলমূল খান বেশী করে।
- গ্যাসের সমস্যা এড়াতে গ্যাস উদ্রেককারী খাবার এড়িয়ে চলুন। অসুবিধা বেশী হলে, ডাক্তারের সাথে কথা বলে প্রেগন্যান্সিতে নিরাপদ গ্যাসের ওষুধ খেতে পারেন। তবে নিজ থেকে কিছু খেতে যাবেন না।
- ঘরে বাইরে হঠাত মাথা ঘুরানোর সমস্যা বেশী হলে, সম্ভব হলে বসে কিংবা শুয়ে পড়ুন। অপেক্ষা করুন স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরা পর্যন্ত।
- কোন কোন ক্ষেত্রে স্পটিং স্বাভাবিক। তবে ব্লিডিং হলে কিংবা স্পটিংয়ের সাথে যদি পিরিয়ডের সময়কার মতো ক্রাম্পিং থাকে, ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- নরমাল প্রেগন্যান্সী হলে, শারীরিক অসুবিধা না থাকলে, হাজব্যান্ডের সাথে শারীরিক সম্পর্কে কোন সমস্যা নেই।
- নিয়মিত পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করুন। ১০ সেকেন্ড করে প্রতিদিন ২০ বার করুন বা তারও বেশী। এতে নরমাল ডেলিভারীর জন্য পেলভিক ফ্লোর প্রস্তুত হবে এবং প্রসব পরবর্তী এই সম্পর্কিত সমস্যা এড়াতে পারবেন।
- বাড়ীর বাইরে কাজ করলে, কাজের জায়গায় বা কাছের সহকর্মীকে জানিয়ে রাখুন। যে কোন সময়ে আপনার যে কোন ধরনের সাহায্যের দরকার হতে পারে।
- প্রেগন্যান্সী সম্পর্কে জানুন। এ বিষয়ে পড়াশুনা করুন। প্রেগন্যান্সি ব্লগগুলোতে যুক্ত হতে পারেন, এতে অন্য হবু মায়েদের সাথে যোগাযোগ গড়ে উঠবে।
- ডাক্তারের কাছে যাবার সময় আপনার সঙ্গীকেও সম্ভব হলে সঙ্গে নিয়ে যান। তাহলে গর্ভাবস্থার বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে দু’জনে একসাথেই জানতে পারবেন।