সপ্তাহ – ৩২

আপনার গর্ভাবস্থার শেষ দিকের পথে আপনার শিশুর শারীরবৃত্তীয় বৃদ্ধি দ্রুত চলছে, এবং আপনার শরীরও প্রভাবিত হচ্ছে। এটি এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ সময়, কারণ শিশুর জন্মের প্রস্তুতি আরও গতি পাচ্ছে। এই সপ্তাহে আপনি কিছু নতুন লক্ষণ অনুভব করতে পারেন, এবং আপনার শারীরিক অবস্থা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবর্তিত হতে পারে।

শিশুর বিকাশ

  • আকার ও ওজন: এই সপ্তাহে আপনার শিশুর আকার প্রায় ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ২ কেজির কাছাকাছি হতে পারে। শিশুর শরীরে চর্বি জমতে শুরু করেছে, যা তাকে শীতের হাত থেকে রক্ষা করবে এবং শিশুর ত্বক আরও মসৃণ হয়ে উঠছে।
  • শ্বাসযন্ত্রের উন্নতি: শিশুর ফুসফুসে এখন আরও উন্নতি হচ্ছে, এবং এই সময় তার শ্বাসযন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থ (surfactant) তৈরি হচ্ছে। যদিও ফুসফুস পুরোপুরি পরিপূর্ণ হয়নি, তবে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা শিশুর জন্মের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
  • চোখের কার্যকারিতা: শিশুর চোখের গঠন পুরোপুরি কার্যকরী হচ্ছে এবং সে আলো এবং অন্ধকারের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে। সে আপনার দিকে তাকালে বা তার চারপাশের আলোতে সাড়া দিতে পারে।
  • হাড়ের শক্তি: শিশুর হাড় এখন শক্ত হতে শুরু করেছে এবং তার মাংসপেশী আরও বিকশিত হচ্ছে। শিশুর হাত-পা এবং শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও শক্তিশালী হচ্ছে। সে এখন তার হাত-পা নেড়ে সাড়া দিতে পারে, এবং অনেক সময় তার মাকে স্পর্শও করতে পারে।

গর্ভাবস্থার শারীরিক লক্ষণ

  • গর্ভাশয়ের চাপ: আপনার গর্ভাশয়ের আকার আরও বড় হওয়ায় তা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে চাপ সৃষ্টি করছে। এটি মূত্রথলি, পাচনতন্ত্র এবং শ্বাসযন্ত্রের উপর চাপ ফেলতে পারে। আপনি আরও বেশি প্রস্রাবের অনুভূতি, খাবারে অরুচি বা হজমের সমস্যা অনুভব করতে পারেন।
  • কোমর ও পিঠে ব্যথা: আপনার শরীরের ভারসাম্য পরিবর্তিত হওয়ায় কোমর ও পিঠে ব্যথা হতে পারে। এটি গর্ভাশয়ের আকার বাড়ার কারণে হয়, এবং পিঠে অতিরিক্ত চাপ পড়ার ফলস্বরূপ। হালকা স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম বা পিলাটেস করতে পারেন, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ: আপনার গর্ভাশয়ের আকার বড় হওয়ার কারণে মূত্রথলির উপর চাপ বাড়ছে, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান করার পাশাপাশি বিশ্রাম নিন এবং যতটা সম্ভব চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
  • ক্লান্তি ও অস্থিরতা: গর্ভাবস্থার শেষ দিকে ক্লান্তি ও অস্থিরতার অনুভূতি আরও বেড়ে যেতে পারে। শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি এবং আপনার শরীরে বাড়তি চাপের কারণে আপনি অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।

আপনার এবং শিশুর জন্য করণীয়

  1. ক্লান্তি কাটানোর জন্য বিশ্রাম নিন:
    • গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শেষ দিকে ক্লান্তি সাধারণ একটি লক্ষণ। তাই আপনার শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন এবং এক্সট্রা শক্তির জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
  2. পুষ্টি নিশ্চিত করুন:
    • আপনার শিশুর শক্তির জন্য প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিম, দুধ, শাকসবজি, পনির, মাংস ও দাল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়াও, ভিটামিন ডি এবং আয়রনের গুরুত্ব বাড়ছে, তাই এগুলির উৎস যেমন সূর্যালোক, সবুজ শাকসবজি, এবং সিকল কোড লিভার অয়েল রাখতে ভুলবেন না।
  3. শারীরিক ব্যায়াম করুন:
    • হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম বা পিলাটেস গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য উপকারী। এটি আপনার শরীরকে নমনীয় রাখে এবং প্রসবের সময় সহায়ক হতে পারে।
  4. বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক স্থান তৈরি করুন:
    • গর্ভাবস্থার শেষের দিকে আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন বাড়বে। তাই, আপনার শয্যা বা বিশ্রাম স্থানটি আরামদায়ক করে তুলুন এবং ঘুমানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করুন।
  5. গর্ভাবস্থার শেষের প্রস্তুতি:
    • আপনি এখন গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, তাই প্রসবের পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং শিশুর জন্য জামা-কাপড় ও অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করুন।

ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা

  • যদি আপনি অতিরিক্ত রক্তপাত বা অস্বাভাবিক স্রাব অনুভব করেন।
  • যদি পেটের তীব্র বা অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভব করেন।
  • যদি ফোলাভাব বা পায়ের তলায় টান অনুভব হয়।
  • যদি শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন।

এই সপ্তাহে আপনার শিশুর বিকাশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এবং আপনি গর্ভাবস্থার শেষ দিকে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য এই সময়টি সুন্দর ও নিরাপদ হতে পারে। শুভকামনা!