এটি এমন একটি সময় যখন আপনার শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ আরও তীব্রভাবে হচ্ছে, এবং আপনি গর্ভধারণের শেষ পর্যায়ে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখন থেকে, আপনার শিশুর জন্মের সময় আসতে খুব বেশি সময় বাকি নেই, তবে তাকে পুরোপুরি প্রস্তুত হতে আরও কিছু সময় দরকার।
শিশুর বিকাশ
- আকার ও ওজন: এই সপ্তাহে আপনার শিশুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৮-৪০ সেন্টিমিটার এবং তার ওজন ১.২ কেজি থেকে ১.৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। শিশুর শরীরের আকার এখন আরও পূর্ণতা পাচ্ছে, এবং তার শরীরের চর্বি জমতে শুরু করছে। শিশুর ত্বক আরও মসৃণ হয়ে উঠছে, এবং তার চেহারা এখন আরও স্পষ্টভাবে ধারণা করা যেতে পারে।
- মস্তিষ্কের বিকাশ: আপনার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ এখন আরও দ্রুত হচ্ছে। এর মধ্যে তার স্মৃতি, চিন্তাভাবনা, এবং তার চারপাশের পরিবেশের প্রতি সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। যদিও শিশুর স্নায়ু ব্যবস্থার পুরোপুরি বিকাশ এখনও হয়নি, তবে তার মস্তিষ্কের গঠন উন্নতির পথে রয়েছে।
- শ্বাসযন্ত্রের উন্নতি: শিশুর শ্বাসযন্ত্রের গঠন আরও উন্নতি লাভ করছে। তার শ্বাসনালী আরও পূর্ণতা পাচ্ছে এবং শ্বাসনালীতে তরল জমে আসছে, যা তার শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রস্তুতিতে সহায়ক। তার ফুসফুসের কাঠামো এখনও পূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়নি, তবে তার শরীরের অন্যান্য সিস্টেমের সাথে সঙ্গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- চোখের বিকাশ: শিশুর চোখের পাতা সম্পূর্ণভাবে খুলে গেছে এবং তার দৃষ্টি এখন আরও উন্নত। সে আপনার এবং তার চারপাশের আলো দেখার জন্য আরও সক্ষম। এভাবে শিশুর চোখের সৌন্দর্য আরও প্রকাশ পাচ্ছে। শিশুটি রাতের অন্ধকারে ঘুমাতে পছন্দ করবে এবং দিনে তার চোখে আলোর প্রতি সাড়া দেবে।
গর্ভাবস্থার শারীরিক লক্ষণ
- কোমর এবং পিঠে ব্যথা: গর্ভাবস্থার এই সময়ে আপনার কোমর এবং পিঠে আরও বেশি চাপ অনুভূত হতে পারে, কারণ শিশুর আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে এই ব্যথা অনুভূত হতে পারে। কোমর ব্যথা কমানোর জন্য সঠিকভাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন এবং যদি প্রয়োজন হয়, কোমরের নিচে কিছু সমর্থন দিয়ে বসুন।
- পায়ের ফোলাভাব: গর্ভাবস্থায় মায়ের পায়ের ফোলাভাব বৃদ্ধি পায়, এবং এটি এই সপ্তাহে আরও বেশি হতে পারে। বিশেষ করে রাতে দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে থাকার পর পায়ের পেশীগুলিতে চাপ পড়ে। পায়ের ফোলাভাব কমাতে প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করুন, এবং পায়ের পাতা উঁচু করে শুতে চেষ্টা করুন।
- অতিরিক্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুভূতি: গর্ভাবস্থার এই সময়ে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। আপনার শরীরের বৃদ্ধি এবং শিশুর অবস্থান শ্বাসনালীতে কিছু চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে অতিরিক্ত শ্বাস নিতে হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, মনোযোগী হয়ে গভীর শ্বাস নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- স্তনবৃদ্ধি ও দুধের প্রস্তুতি: আপনার স্তনবৃদ্ধি এখন আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে, এবং স্তনের অঙ্গগুলি দুধ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। স্তনের ত্বকও অনেক বেশি সংবেদনশীল হতে পারে, তাই আরামদায়ক ব্রা পরা এবং স্তনগুলিকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত।
আপনার এবং শিশুর জন্য করণীয়
- পুষ্টির দিকে মনোযোগ দিন:
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি: এই সময়ের জন্য ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুধ, দই, পনির এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আপনার ক্যালসিয়াম চাহিদা পূর্ণ করুন। আপনি যদি সূর্যের আলোতে কিছু সময় কাটান, তবে এটি আপনার ভিটামিন ডি-এর চাহিদাও পূরণ করবে।
- ফল ও শাকসবজি: ফল ও শাকসবজি আপনার শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করে, যা আপনার গর্ভাবস্থায় সহায়ক। ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বিশেষভাবে খেতে চেষ্টা করুন।
- ব্যায়াম করুন এবং শরীরের যত্ন নিন:
- হালকা ব্যায়াম: এটি আপনার শরীরকে নমনীয় এবং শক্তিশালী রাখবে। হাঁটা, সাঁতার, বা যোগব্যায়াম আপনার শরীরের জন্য খুব উপকারী।
- প্রেসার পয়েন্ট ম্যাসেজ: কোমর ও পিঠে অতিরিক্ত চাপ কমাতে আপনি ম্যাসেজও নিতে পারেন। তবে খুব জোরালো ম্যাসেজ না করে নরমভাবে ম্যাসেজ করার চেষ্টা করুন।
- নিয়মিত চিকিৎসক পরিদর্শন:
- গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে প্রবেশ করার পর নিয়মিত চিকিৎসক পরিদর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের অগ্রগতির পর্যালোচনা করতে চিকিৎসকের কাছে যান, এবং যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ যেমন পেটের তীব্র ব্যথা, রক্তস্রাব বা অতিরিক্ত পায়ের ফোলাভাব হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- মানসিক এবং শারীরিক শান্তি বজায় রাখুন:
- আপনার শারীরিক অবস্থা কিছুটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত শান্তি বজায় রাখেন, তবে এটি আপনার সন্তানের জন্যও উপকারী হবে। ধ্যান করুন, সঙ্গীত শুনুন, প্রিয় বই পড়ুন বা কিছু সময় একা কাটান। এতে আপনার মানসিক চাপ কমবে এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকবে।
ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা
- যদি পেটে তীব্র ব্যথা বা অস্বাভাবিক অস্বস্তি অনুভূত হয়।
- যদি আপনার পা, হাত বা মুখে অতিরিক্ত ফোলাভাব দেখা দেয়।
- যদি আপনি অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ অনুভব করেন।
- যদি আপনার শ্বাসকষ্ট বা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হয়।
এই সপ্তাহে আপনার শিশুর বিকাশ দ্রুত বাড়ছে, এবং আপনি গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছেন। আপনার শরীর এবং মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ, তাই যত্ন নিন এবং নিজের প্রতি মনোযোগ দিন। আগামী সপ্তাহে আপনার শিশুর আরও কিছু নতুন পরিবর্তন দেখা যেতে পারে, এবং আপনি একে একে জন্মের জন্য প্রস্তুত হতে পারবেন।