১৪তম সপ্তাহে আপনার শিশুর মাথা তার শরীরের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে আরও বড় হচ্ছে। আপনার শিশুর অন্ত্র তার নাভিরজ্জু ভিতরে ক্রমবর্ধমান হচ্ছে এবং তার কিডনি প্রস্রাব উৎপাদন, যা আপনার শিশু তার চারপাশের অ্যামনিয়োটিক তরলের মধ্যে মুক্ত করছে – এই প্রক্রিয়া সে তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে পর্যন্ত বজায় রাখবে। আপনার শিশুর হাসি – কান্নার জন্য, কথা বলার জন্য অতি প্রয়োজনীয় স্বরতন্ত্রীর গঠন হতে শুরু করেছে।
১৪ সপ্তাহে শিশু কেমন হয়?
১৪তম সপ্তাহ নাগাদ গর্ভস্থ শিশুটি একটি লেবুর আকার ধারণ করবে। তার হৃদস্পন্দন এখন খুবই শক্তিশালী হবে এবং আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় স্পষ্ট শোনা যাবে। তার হৃদস্পন্দন এখন দ্রুত গতিতে চলবে, যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির স্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের দ্বিগুণ। পা থেকে মাথা পর্যন্ত গর্ভস্থ শিশুটির দৈর্ঘ্য এ পর্যায়ে প্রায় ৮৫ মিলিমিটার বা ৩.৫ ইঞ্চি হবে।
হৃদপিণ্ডের পাশাপাশি এই সপ্তাহ নাগাদ শিশুটির অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করবে। কিডনী (Kidney) মূত্র তৈরি করবে। লিভার (Liver) পিত্ত (Bile) ক্ষরণ করবে, আর অগ্নাশয় (Pancreas) হরমোন নিঃসরণ করবে। আপনার ক্ষুদে যোদ্ধাটি এখন আর শুধু হাত-পা নাড়াবে না, সেই সাথে মৃদু ঘুষি আর লাথিও দেবে। ভ্রু কুঁচকানো কিংবা আড়চোখে দেখার অনুশীলনও ইতিমধ্যেই সে শুরু করে দেবে।
এ সপ্তাহে শারীরিক পরিবর্তন
হঠাৎ করেই একদম অন্যরকম বোধ হচ্ছে? গর্ভাবস্থার মাঝের তিনমাস সময়টাতে এরকম অনুভব করা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলো এখন আর থাকবে না। এসময় আপনি আরও সতেজ অনুভব করবেন। খুব কম গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রেই এই পর্যায়ে এসে সকালবেলার অসুস্থতা থাকে। বেশির ভাগ মা-ই এখন এই ভেবে আনন্দিত বোধ করতে পারেন যে সেই দিন চলে গেছে!
এ পর্যায়ে এসে নতুন যে উপসর্গ তৈরি হতে পারে তা হচ্ছে কোনো একটা নির্দিষ্ট খাবারের জন্য প্রচণ্ড ক্ষুধা। আপনি হয়তো এমন সব খাবার খেতে চাইবেন যা কখনোই আপনার পছন্দের তালিকায় ছিলো না।
যেহেতু এখন ক্রমাগত বড় হতে থাকা জরায়ুকে জায়গা করে দেয়ার জন্য আপনার পেশী এবং লিগামেন্টগুলোতে টান বাড়বে, আপনি সামান্য ব্যথা অনুভব করতে পারেন।
যদি আপনি এখনো ব্যায়াম শুরু না করেন, তাহলে এ পর্যায়ে এসে এক-আধটু ব্যায়াম করতে পারেন। এতে করে আপনার পেশী সবল থাকবে। তবে হ্যাঁ, সক্রিয় থাকতে পারা যেমন ভালো, তেমনি আপনাকে এটাও জানতে হবে যে কতটুকু পর্যন্ত আপনি শরীরকে পরিশ্রম করাতে পারবেন। শরীরে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারনে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। দুজনের পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য আপনার হৃদপিণ্ড আগের চাইতে দ্রুত কাজ করছে। চেষ্টা করুন সুষম খাবার খাওয়ার।
এই সপ্তাহে আপনার করনীয় কি?
কোথাও ঘুরতে যাবার জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। কারণ, আগামী তিনমাসের জন্য আপনি আবারও সতেজ হয়ে উঠছেন এবং এখন গর্ভপাত হবারও আর আশঙ্কা নেই।
নিজের শরীরের প্রতি বাড়তি একটুই যত্ন নিন। খেয়াল করুন কাজের সময় যেন পেটের উপর তেমন কোনও চাপ না পরে। মেরুদন্ড সোজা রেখে হাঁটা এবং বসার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও খেয়াল করুন আপনি যে খাদ্য গ্রহন করছেন তা যেন স্বাস্থ্য সম্মত হয়। তাতেই আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে অনায়াসে।
অন্যদিকে পায়ে ব্যথা থাকলে দিনের বিভিন্ন সময়ে কাজের ফাঁকে পায়ের বিশ্রাম দিন। কিছুক্ষন পর পর পায়ের উপর চাপ কমাতে, পা ঝুলিয়ে বসুন। তবে কখনোই খুব বেশী শুয়ে বা বসে থাকা যাবে না, এতে করে পায়ে পানি চলে আসতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী কার্যকর সুখাসনে বসা। সন্তান ধারনের আগে থেকেই যদি এই যোগাসন নিয়মিত অনুশীলন করা হয় তবে উল্লেখিত কোনও ব্যাথাই আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারবে না।
এই সপ্তাহে আপনার জন্য পরামর্শ:
গর্ভাবস্থার শুরু থেকে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ বা পরিস্কার করা নিশ্চিত করতে হবে যাতে ডেন্টাল প্লাক সৃষ্কি না হয়। এ ক্ষেত্রে দন্ত চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে গর্ভাবস্থার পুর্বেই দাঁত স্কেলিং করা এবং সঠিক ব্রাশ চালনা পদ্ধতি জেনে নেওয়া প্রয়োজন। ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী বলা যায় খাবারের মধ্যবর্তী সময়গুলোতে শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রবণ বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এতে যেমন দেহের বাড়তি ওজন কমানো সম্ভব তেমনি দাঁতের ক্ষয়রোগ রোধ করা সহজ।
চতুর্দশ সপ্তাহের জন্য যত্ন:
হাল্কা ধরণের ব্যায়াম করে, প্রচুর তরল পান করে এবং প্রচুর ফল ও সবজি খেয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আরাম পাওয়ার চেষ্টা করুন। আপনি এখন ঠান্ডা, ফ্লু এবং অন্যান্য জীবাণুর প্রতি অনেক বেশী স্পর্শকাতর হয়ে পড়বেন। তাই আপনি আপনার হাত সবসময় ধুয়ে নেবেন এবং কারো সাথে পানীয় বা খাবার ভাগ করবেন না। যদি আপনার মনে সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিয়ে থাকে তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব আপনার চিকিৎসকের সাথে দেখা করুন।