বাচ্চারাও বিভিন্ন রকম খাবারের স্বাদ বোঝে, তাই মাঝে মাঝে তাদের খাবারের স্বাদবদল করতে হয়। আমাদের যেমন রোজ এক খাবার খেতে ভালো লাগে না, ছোট শিশুদের ক্ষেত্রেও সেরকম ঘটে। ৬ মাস বয়স পার হলেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সহজপাচ্য নানা রকম খাবার বানিয়ে দিন ওদের। মনে রাখবেন, যেন বুকের দুধ ও খাবার মিলিয়ে আপনার ছোট্ট সোনামণি প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিগুণ পেয়ে যায়।
শিশুদের বয়স অনুসারে তাদের কি ধরনের খাবার খাওয়ানো উচিত এবং সহজে কত রকমের মজাদার খাবার তৈরি করা সম্ভব তারই একটা খসড়া দেওয়ার চেষ্টা করলাম আজকে। দেখুন তো, এবার আপনার ছোট্ট সোনামনির কাছে আপনি সেরা রাঁধুনি হয়ে ওঠেন কি না!
শিশুর বয়স যখন ৬-৮ মাসঃ
ঘুম থেকে উঠেঃ
বুকের দুধ/ ফর্মুলা।
জল খাবারঃ গাজর-বিটের স্যুপ/ আপেল ভর্তা/ ডালের জল/ চটকে মাখা কলা/ কুমড়ো আলুর ভর্তা/ রাঙা আলুর ভর্তা/ কুমড়োর ভর্তা/ চিকেন স্যুপ, সুজির ক্ষীর।
দুপুরের খাওয়াঃ
ডাল-সব্জি দিয়ে খিচুড়ি/ চারাপোনার পাতলা ঝোল দিয়ে ভাত/ সবজি, মুসুরি ডাল, ডিমের কুসুম চটকে মাখা/ ঘি দিয়ে ভাত চটকে মাখা, বাড়িতে পাতা দই খুব অল্প/ পালংশাক ও মুসুরি ডালের স্যুপ/ আলু, ডিমের কুসুম, ভাত অল্প ঘি দিয়ে চটকে মাখা/ সবরকম সবজি সেদ্ধ, অল্প মাছ ও ডিমের কুসুম চটকে মাখা।
বিকেলের টিফিনঃ
বার্লি/মুগ ডালের জল/ গাজরের জুস/ বাড়ির তৈরি সেরেল্যাক/ একটু ড্রাই ফ্রুটস গুঁড়ো করে গাজরের ক্ষীর/ ছাড়ানো খেজুর থেঁতো করা/ মরসুমি ফল।
রাতের খাওয়াঃ
বাড়িতে তৈরি সেরেল্যাক/ ওটস ক্ষীর/ উপমা/ সুজির হালুয়া/ সেরেল্যাক/ ওটস ও ফর্মুলার মিশ্রণ।
ঘুমানোর আগেঃ
বুকের দুধ/ ফর্মুলা।
শিশুর বয়স যখন ৮-১০ মাসঃ
শিশুর বয়স ৮ মাস হলে তাকে ডিম খাওয়ানো শুরু করতে পারেন। তবে শুধু ডিমের কুসুম।আর ১৮ মাসের আগে শিশুকে গরুর দুধ খাওয়াবেন না।
ঘুম থেকে উঠেঃ
বুকের দুধ/ ফর্মুলা
জল খাবারঃ আপেল ভর্তা/ ওটস/সব্জির উপমা/ সুজি ও কলার হালুয়া/ টম্যাটো স্যুপ/ সব্জির স্যুপ/ একটি ডিমের কুসুম আলু দিয়ে চটকে/ সবজি ও চিকেন স্টক দিয়ে স্যুপ/ ডালের জল।
দুপুরের খাওয়াঃ
ভাত, মুসুরি ডাল,আলু ও ডিমের কুসুম চটকে মাখা/ শাক বা অন্য সবুজ তরকারি, ডাল ও চাল দিয়ে খিচুড়ি/ আধপিস মাছ সেদ্ধ করে ভাত, ডাল ও আলুর সাথে চটকে মাখা/ সমস্ত সবজি সেদ্ধ করে ভর্তা/ সবজি দিয়ে খিচুড়ি/ মাখন দিয়ে ভাত,আলু, ডালের জল চটকে মাখা/ চারাপোনার পাতলা ঝোল দিয়ে ভাত।
বিকেলের টিফিনঃ
বিটের হালুয়া/ সুজির উপমা/ কলার প্যানকেক/ মিষ্টি আলুর পায়েস/ সুজির পায়েস/আপেল সুজি ক্ষীর/ কলার কুকিজ/ স্মুদি/ আপেল মাফিন/গাজরের হালুয়া/ মরসুমি ফল/পেঁপের ভর্তা/ ড্রাই ফ্রুটস গুঁড়ো করে ফর্মুলা বা মায়ের দুধে মিশিয়ে।
রাতের খাওয়াঃ
আটার হালুয়া/ চিকেন স্টু/ ডাল- সবজির স্যুপ/ ভাত আর ডাল চটকে মাখা/ সাবুর খিচুড়ি/ সেরেল্যাক/ বেকড আলু।
ঘুমানোর আগেঃ
বুকের দুধ/ ফর্মুলা।
শিশুর বয়স যখন ১০-১২ মাসঃ
ঘুম থেকে উঠেঃ
বুকের দুধ/ ফর্মুলা।
জল খাবারঃ ওটস পায়েস/ আপেল ভর্তা/ নরম পাস্তুরাইজড চিজ/ ছাতুর শরবত/ সুজি ও কলার হালুয়া/ স্মুদি/ টম্যাটো স্যুপ/ সব্জির স্যুপ/ একটি ডিমের কুসুম আলু দিয়ে চটকে/ সবজি ও চিকেন স্টক দিয়ে স্যুপ/ডালের জল।
দুপুরের খাওয়াঃ
ভাত,মুসুরি ডাল, আলু ও ডিমের কুসুম চটকে মাখা/ শাক, বিন্স ইত্যাদি সবুজ তরকারি, ডাল ও চাল দিয়ে খিচুড়ি/ আধপিস মাছ সেদ্ধ করে ভাত, ডাল ও আলুর সাথে চটকে মাখা/ এক টুকরো মুরগির মাংস ভালো করে সেদ্ধ করে ডাল ও ভাতে চটকে মাখা, স্বাদের জন্য সামান্য গন্ধরাজ বা পাতিলেবুর রস দিন/ গাজর/ মুসুর ডাল/ রাজমা/ মটরশুঁটি, বিন্স সেদ্ধ করে ভর্তা/ মাখন দিয়ে ভাত,আলু, ডালের জল চটকে মাখা/ ফুলকপি/ ব্রকলি দিয়ে চারাপোনার পাতলা ঝোল ও ভাত/ ভেজিটেবিল পোলাও।
বিকেলের টিফিনঃ
বিটের হালুয়া/ সুজির উপমা/বার্লি/ কলার প্যানকেক/ মিষ্টি আলুর পায়েস/ সুজির পায়েস/আপেল সুজি ক্ষীর/বাড়িতে বানানো কেক/ ভাপানো ধোসা/ ইডলি/ কলার কুকিজ/ স্মুদি/ আপেল মাফিন/গাজরের হালুয়া/নরম পিঠে/ মরসুমি ফল ছাড়াও পেঁপে, আপেল, কলা /পেঁপের ভর্তায় ড্রাই ফ্রুটস গুঁড়ো করে ফর্মুলা বা মায়ের দুধে মিশিয়ে।
রাতের খাওয়াঃ
আটার হালুয়া/ পোহা/ চিকেন স্টু/ সেরেল্যাক/ দালিয়া/ ডাল- সবজির স্যুপ/ মুরগির মাংস খুব ভালো করে সেদ্ধ করে সব্জির সাথে মিশিয়ে/ ভাত আর ডাল চটকে মাখা/ সাবুর খিচুড়ি/ সেরেল্যাক/ বেকড আলু।
ঘুমানোর আগেঃ
বুকের দুধ/ ফর্মুলা।
খুব ছোটবেলা থেকেই যদি শিশুর সুষম খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা যায়, তবে সেটা ভবিষ্যতেও অনেক কাজে দেয়। শিশুর জন্মের পাঁচ মাস হতেই অল্প অল্প করে বিভিন্ন স্বাদের নরম খাবারের সঙ্গে তাকে অভ্যস্ত করে তোলা উচিত। যেমন নরম খিচুড়ি, মিষ্টি আলু, ডাল, সবজি ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন খুব সহজেই। স্বাদের দিকেও খেয়াল রাখতে ভুলবেন না। কেননা আপনার মুখে যদি তা স্বাদহীন হয় তাহলে নিঃসন্দেহে আপনার শিশুর মুখেও তা একই রকম হবে। যখন শিশু ছয় মাস বয়স অতিক্রম করবে, তখন তার খাবারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। ছোট্ট সোনামনির জন্য একটা সুনির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট মেনে চলার চেষ্টা করুন। আর অবশ্যই খেয়াল রাখুন প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যেন প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদানগুলো মজুদ থাকে। ৬ থেকে ১২ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য দিন প্রতি ১১ মিলিগ্রাম আয়রনসমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। তাই আয়রনের পরিমাণ যেন ঠিক থাকে, সেদিকেও নজর দিন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি একজন ভাল পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার শিশুর খাবারের তালিকা তৈরি করে নেন!