গর্ভধারণ সব নারীর কাছেই একটি অতি কাংখিত বিষয়। যখন একজন নারী প্রথম বারের জন্য গর্ভধারন করেন তখন তার কাছে অনেক কিছুই অজানা থাকতে পারে, এই অজানার বা অজ্ঞতার জন্য অনেক সময় আমাদের সমাজে নানা ধরনের কুসংস্কার একজন মায়ের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এজন্য গর্ভধারনের পর একজন গর্ভবতী মায়ের উচিত একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হওয়া। এতে শুধু হবু মা-ই নয় গর্ভের শিশুটিরও নিরাপত্তা জড়িত। সাধারনভাবে এই সময়ে গর্ভবতী মা যদি অল্প কিছু নির্দেশ মেনে চলে, তাহলেই সুস্হ গর্ভধারন অনেকখানি নিশ্চিত করা সম্ভব।
আসুন সেরকমই কিছু বিষয় জেনে নিই।
১. খাদ্যঃ
গর্ভবতী মাকে এ সময় অবশ্যই পুষ্টিকর, সহজপাচ্য এবং অধিক আমিষ বা প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন খাদ্য তালিকায় শাক-সবজি এমন পরিমানে রাখা হয় যাতে কোন ভিটামিন এর অভাব না হয়। একজন আনুমানিক ৫০ কেজি ওজনের গর্ভবতী মায়ের জন্য আদর্শ খাবারে অন্তত ২৫০০ কিলোক্যালরি শক্তির যোগান থাকা উচিত।
২. বিশ্রাম ও ঘুমঃ
একজন গর্ভবতী মা’র একটি সুস্থ্য-সবল সন্তান জন্ম দেবার জন্য কিছুটা বাড়তি বিশ্রাম এবং ঘুমানো অধিক প্রয়োজন। দিনে অন্তত ২ ঘন্টা ঘুমসহ দৈনিক কমপক্ষে ১০ ঘন্টা ঘুমানো মায়ের জন্য খুবই জরুরী।
৩. কোষ্ঠ্যকাঠিন্য:
লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গর্ভবতী মা এর কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দেখা না দেয়, এতে গর্ভের সন্তানের উপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে, তাই নিয়মিত মলাশয় খালি রাখতে হবে। বেশী বেশী করে শিকড় জাতীয় শাক-সবজি খেলে এই সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৪. স্তনঃ
গর্ভকালীন সময়ে স্তন সামান্য বড় হতে পারে, স্তনের বোটার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসে এবং স্তন সামান্য টনটন করাটাও স্বাভাবিক। এসব বিষয় মাথায় রেখে স্তনের বিশেষ যত্ন নেয়া উচিত।
৫. যৌন মিলনঃ
গর্ভের প্রথম তিন মাসে যৌন মিলন থেকে বিরত থাকাই উত্তম। গর্ভের শেষ ৬ সপ্তাহও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা বান্চনীয়। তবে এ নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ সাপেক্ষে বিশেষ ভাবে যৌনমিলন করা যেতে পারে।
৬. ভ্রমনঃ
সম্ভব হলে অবশ্যই গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যে কোনো ধরনের লম্বা ভ্রমন থেকে বিরত থাকা উচিত।
৭. টিকা:
গর্ভের শুরুতেই সাধারনত অনেকেই টিটেনাস এর টিকা নিয়ে থাকে। এই টিকা নেয়ার কারনে সন্তানের কোনো ধরনের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই বরং না নিলে প্রসবের সময় কিছুটা ঝুকির সম্ভাবনা থেকেই যায়।
৮. ধূমপান:
গর্ভাকালীন সময়ে কোনো অবস্থাতেই গর্ভবতী মায়ের ধুমপান করা যাবে না, ধুমপানের কোন অভ্যাস থেকে থাকলে সন্তানের মঙ্গলের জন্য হলেও ঐ মুহুর্তে তা ত্যাগ করতেই হবে। গর্ভবতী মায়ের পাশে অন্য কেউ ধুমপান করলেও শিশুটির ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে। যেসব মায়ের মদ্যপানের অভ্যাস আছে তাদেরকেও এসময়ে অবশ্যই এ অভ্যাসটি থেকে দূরে থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় নেশা জাতীয় যেকোন দ্রব্য সেবন শিশুর জন্য স্থায়ী ক্ষতির কারন হতে পারে।
৯. গোসল ও পোশাকঃ
প্রতিদিন গোসল করার অভ্যাস করতে হবে। ঢিলে ঢালা ও আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা বান্চনীয়, এজন্য সব চিকিৎসকই এ উপদেশ দিয়ে থাকেন।
১০. বিবিধ :
গর্ভকালীন সময়ে পায়ে পানি আসা, উচ্চ রক্তচাপ, প্রসাব কমে যাওয়া, পেটের উপর দিকে ব্যথা কিংবা মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যথা জাতীয় কোন সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসক কে জানাতে হবে।