সপ্তাহ – ৩৮

অভিনন্দন! আপনি এখন গর্ভাবস্থার শেষতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন। আপনার শিশু এখন জন্মের জন্য প্রস্তুত। গর্ভের মধ্যে আর অল্প কিছু দিন সময় বাকি, এবং এই সপ্তাহে আপনার এবং শিশুর শরীরে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে। এখন আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিজেকে প্রস্তুত রাখা এবং শরীরের পরিবর্তনগুলোর প্রতি সতর্ক থাকা।

শিশুর বিকাশ

  • আকার ও ওজন: এই সপ্তাহে আপনার শিশুর আকার প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার এবং তার ওজন ৩ কেজি হতে পারে। শিশুর শারীরিক গঠন সম্পূর্ণ এবং সে জন্মের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
  • ফুসফুস: শিশুর ফুসফুস এখন পুরোপুরি প্রস্তুত, সে জন্মের পর শ্বাস নিতে পারবে। ফুসফুসের এন্টেনাটাল পর্যায়ের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে।
  • শিশুর ত্বক: শিশুর ত্বক এখন গোলাপি এবং মসৃণ, তবে শরীরের নিচের অংশে কিছু লালচে দাগ থাকতে পারে, যা শিশুর জন্মের পর পুরোপুরি সঠিক হয়ে যাবে।
  • শিশুর শরীরের অন্যান্য পরিবর্তন: শিশুর শরীরের নিচের দিকে ত্বকের নিচে আরও চর্বি জমে যাচ্ছে, যা তাকে জন্মের পর ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করবে এবং তাপমাত্রার জন্য প্রস্তুত করবে। শিশুর শরীরে আরও শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে এবং মাংসপেশীও শক্ত হচ্ছে।
  • শিশুর গতিবিধি: শিশুটি আরও কম নড়াচড়া করতে পারে, কারণ গর্ভাশয়ের ভিতরে জায়গা কমে গেছে। তবে, তার ছোট ছোট নড়াচড়া এবং পদক্ষেপ এখনো অনুভব করা সম্ভব। শিশুর মাথা নিচের দিকে চলে আসছে, যা জন্মের জন্য প্রাকৃতিক প্রস্তুতি।

গর্ভাবস্থার শারীরিক লক্ষণ

  • গর্ভাশয়ের প্রস্তুতি: আপনার গর্ভাশয় এখন আরও দৃঢ় হয়ে উঠেছে, এবং কনট্রাকশন আরও শক্তিশালী হতে পারে। কিছু মহিলার ক্ষেত্রে এই কনট্রাকশনগুলো প্রকৃত প্রসব বেদনা না হলেও কিছুটা অনুশীলন হতে পারে। আপনি যদি কনট্রাকশন অনুভব করেন, তবে তা আপনার শরীরের প্রস্তুতির লক্ষণ হতে পারে।
  • পেটের নিচে চাপ: পেটের নিচে চাপ এবং স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি অস্বস্তি অনুভব করা সাধারণ। শিশুর মাথা গর্ভাশয়ের নিচে চলে আসার কারণে এটি আরও অনুভূত হতে পারে।
  • ব্রেস্ট সিক্রেশন: স্তন থেকে কলস্ট্রাম (প্রথম দুধ) বের হতে শুরু করতে পারে। এটি আপনার শিশুর জন্য অমূল্য পুষ্টি এবং অ্যান্টিবডি সরবরাহ করে।
  • ব্র্যাকটিক্স হিক্স কনট্রাকশন: এখন গর্ভাশয়ের শক্তিশালী কনট্রাকশন আরও বাড়তে পারে, কিন্তু যেগুলো প্রকৃত প্রসব বেদনা নয়। তবে, যদি কনট্রাকশনগুলো অনেক বেশি শক্তিশালী বা নিয়মিত হয়ে যায়, তাহলে তা প্রসবের সূচনা হতে পারে।
  • মেজাজ পরিবর্তন: এই সময় অনেক মায়েরই মেজাজ পরিবর্তন হতে পারে, এবং কিছুটা উদ্বেগ বা অস্থিরতা অনুভব করা স্বাভাবিক। তবে, এটা শুধুমাত্র গর্ভাবস্থার শারীরিক ও মানসিক চাপের অংশ হতে পারে।

আপনার এবং শিশুর জন্য করণীয়

  1. বিশ্রাম ও শরীরের প্রতি মনোযোগ:
    • গর্ভাবস্থার এই পর্যায়ে শরীর বেশি ক্লান্ত হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিন এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম থেকে বিরত থাকুন।
  2. হাসপাতাল প্রস্তুতি:
    • শিশুর জন্মের জন্য সমস্ত প্রস্তুতি এখন শেষ করতে হবে। হাসপাতাল ব্যাগ প্রস্তুত রাখা এবং চিকিৎসকের সাথে শেষ মুহূর্তের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
  3. গর্ভাশয়ের চাপ কমানোর জন্য চেষ্টা করুন:
    • যদি পেটের নিচে চাপ অনুভব করেন, তবে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা আপনাকে স্বস্তি দিতে পারে। তবে, যদি এটি বেশি হয়ে যায় এবং অসহ্য হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  4. ডাক্তারের পরামর্শ:
    • গর্ভাবস্থার এই সময় যদি কোনও পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন, বিশেষ করে প্রসবের আগে কোনো ব্যথা বা কনট্রাকশন অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
  5. শিশুর জন্য প্রস্তুতি:
    • আপনি যদি জন্মের জন্য প্রস্তুত না হয়ে থাকেন, তবে এখনই শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু সংগ্রহ করতে শুরু করুন, যেমন পেটিকোট, ডায়াপার, শিশুর পোশাক, বিছানা ইত্যাদি।

ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা

  • যদি আপনি নিয়মিত কনট্রাকশন অনুভব করেন, বিশেষ করে যা শক্তিশালী ও ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • যদি শরীরের কোথাও অত্যাধিক ফোলাভাব বা ব্যথা অনুভব করেন।
  • যদি আপনাকে অতিরিক্ত ক্লান্তি বা শ্বাসকষ্ট অনুভব হয়।
  • যদি স্তন থেকে অতিরিক্ত তরল প্রবাহিত হয়।

এ সপ্তাহে, আপনার গর্ভাবস্থা শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং আপনি নিশ্চয়ই শ্বাস বন্ধ করতে শুরু করেছেন, কারণ শিশুর জন্ম আসন্ন। এখন আপনার শরীর প্রস্তুত হচ্ছে, এবং সবকিছু ঠিক থাকলে খুব শীঘ্রই আপনার শিশুকে পৃথিবীতে স্বাগতম জানাতে পারবেন। শুভ জন্মের প্রস্তুতি!