সপ্তাহ – ৩৫

অভিনন্দন! আপনি এখন গর্ভাবস্থার শেষ দিকের দিকে এগিয়ে চলেছেন। গর্ভাবস্থার এই সময়ে আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য বিশেষ কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন। শিশুর জন্ম খুবই নিকটে, তাই আপনার শরীর এবং মন একসাথে প্রস্তুত হতে শুরু করেছে। এই সপ্তাহে অনেক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসবে, যার ফলে আপনার দিনযাপন কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

শিশুর বিকাশ

  • আকার ও ওজন: শিশুর আকার প্রায় ৪৮ সেন্টিমিটার এবং ওজন ২.৫ কেজির কাছাকাছি। এখন শিশুর শরীরের চর্বি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা তাকে শীতের হাত থেকে রক্ষা করবে এবং তার ত্বক আরও নমনীয় হবে। শিশুর ত্বক এখন আরও মসৃণ হয়ে উঠছে।
  • ফুসফুসের পরিপূর্ণতা: শিশুর ফুসফুস এখন সম্পূর্ণভাবে পরিপূর্ণ। সে শ্বাস নিতে সক্ষম, তবে এখনও তার শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ হতে কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু এখন, যদি শিশুর জন্ম হয়, সে শ্বাস নিতে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারবে।
  • হাড় ও মাংসপেশী: শিশুর হাড় এখন অনেক শক্ত হয়ে গেছে এবং তার মাংসপেশী আরও সুদৃঢ় হচ্ছে। সে তার হাত-পা নেড়ে এবং গর্ভাশয়ে আরও বেশি জায়গা নেয়ার চেষ্টা করছে। তার শরীরের পেশী শক্তিশালী হয়ে উঠছে, এবং সে উল্টো বা পাশের দিকে ঘুরতে সক্ষম।
  • দৃষ্টিশক্তির উন্নতি: শিশুর দৃষ্টিশক্তি এখন প্রায় সম্পূর্ণভাবে পরিপূর্ণ। সে আপনার দিকে তাকিয়ে সাড়া দিতে পারে এবং আলো বা অন্ধকারের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

গর্ভাবস্থার শারীরিক লক্ষণ

  • ব্র্যাকটিক্স হিক্স কনট্রাকশন: এই সময়ে আপনি ব্র্যাকটিক্স হিক্স কনট্রাকশন অনুভব করতে পারেন, যা গর্ভাশয়ের অনুশীলন বা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কাজ করে। এটি অস্বস্তিকর হলেও, অনেক নারীর জন্য এটি প্রাকৃতিক একটি অংশ। তবে, যদি কনট্রাকশনগুলো নিয়মিত বা শক্তিশালী হয়, ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • ক্লান্তি এবং বিশ্রামের প্রয়োজন: এখন আপনার শরীর অনেক বেশি ক্লান্তি অনুভব করতে পারে। বিশ্রাম নেওয়া এবং শরীরের চাপ কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে কোনও কাজ করার সময় বিরতি নিন এবং শুয়ে বিশ্রাম নিন।
  • পায়ের ফোলাভাব ও পানি জমা: গর্ভাবস্থার শেষের দিকে পায়ের ফোলাভাব বেড়ে যেতে পারে। এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক পরিবর্তন। তবে, যদি অতিরিক্ত ফোলাভাব হয় বা পায়ের ত্বকে লালচে হয়ে যায়, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
  • ব্রেস্ট নরম হওয়া এবং প্রস্তুতি: স্তন এখন আরও নরম হতে পারে, এবং স্তনের পিপিইনও (colostrum) তৈরি হতে শুরু করেছে, যা শিশুর প্রথম খাবার হিসেবে কাজ করবে। এই সময়ের মধ্যে স্তনযন্ত্র প্রস্তুতির জন্য কিছু হালকা ম্যাসাজ বা যত্ন নেওয়া যেতে পারে।

আপনার এবং শিশুর জন্য করণীয়

  1. বিশ্রাম নিন এবং শরীরের যত্ন নিন:
    • গর্ভাবস্থার শেষ দিকে বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি শারীরিকভাবে ক্লান্ত অনুভব করেন, তাহলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। পা উঁচু করে শোয়াতে পায়ের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করবে।
  2. ফল ও শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস বজায় রাখুন:
    • এই সময়ে শিশুর পুষ্টির জন্য ফল, শাকসবজি, দুধ এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। নিয়মিত পানি পান করুন এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখুন।
  3. প্রস্তুতি নিন এবং পরিকল্পনা করুন:
    • আপনার সন্তান জন্মের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। হাসপাতাল ব্যাগ প্রস্তুত রাখুন এবং সন্তান জন্মের সময় আপনার পাশে যাদের প্রয়োজন তাদের নাম্বার প্রস্তুত রাখুন। এছাড়া, যদি আপনি কিভাবে প্রসবের প্রস্তুতি নেবেন তা নিয়ে ভাবছেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  4. বিশেষ যত্ন নিন:
    • গর্ভাবস্থার এই সময় আপনার শরীর আরও বেশি অনুভূতিশীল হয়ে উঠতে পারে, তাই যে কোনও নতুন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। পাশাপাশি, শিথিলতার জন্য হালকা যোগব্যায়াম করতে পারেন, তবে খুব বেশি ভারী ব্যায়াম থেকে বিরত থাকুন।

ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা

  • যদি আপনার প্রসবের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকে বা আপনার কোনও উদ্বেগ থাকে।
  • যদি ব্র্যাকটিক্স হিক্স কনট্রাকশন শক্তিশালী বা নিয়মিত হতে থাকে।
  • যদি ফোলাভাব বা শ্বাসকষ্ট খুব বেশি বাড়ে।
  • যদি স্রাব বা রক্তপাত ঘটে।

এ সপ্তাহে, আপনি সন্তান জন্মের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে ভুলবেন না এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। শুভকামনা এবং নিরাপদ গর্ভাবস্থা কামনা করছি!