সপ্তাহ – ৩৪

আপনি গর্ভাবস্থার শেষ মাসের দিকে চলেছেন এবং আপনার শিশুর জন্ম খুবই নিকটে। এখন সময় এসেছে আপনি এবং আপনার শিশুর জন্য আরও প্রস্তুতি নিতে। এই সপ্তাহে শিশুর শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটবে, এবং তার বিকাশের পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছাবে। গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির জন্য কিছু বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন।

শিশুর বিকাশ

  • আকার ও ওজন: শিশুর আকার প্রায় ৪৭ সেন্টিমিটার এবং ওজন ২.৩ কেজি হতে পারে। শিশুর শরীরে এখন আরও বেশি চর্বি জমছে, যা তাকে তাপমাত্রার পরিবর্তন থেকে রক্ষা করবে এবং শক্তিশালী করে তুলবে। শিশুর হাড় এখন আরও শক্ত হয়ে উঠছে এবং মস্তিষ্কের বিকাশ দ্রুত হচ্ছে।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস: শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের সক্ষমতা উন্নত হচ্ছে। তার ফুসফুসের অ্যালভিওলি (air sacs) উন্নত হচ্ছে এবং পরিপূর্ণভাবে কাজ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এখন, শিশুর শরীর অক্সিজেন গ্রহণ এবং প্রক্রিয়া করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
  • চোখের উন্নতি: শিশুর চোখের রেটিনা এবং মস্তিষ্কের মধ্যে আরও সম্পর্ক গড়ে উঠছে, যার ফলে সে আপনার দিকে তাকিয়ে সাড়া দিতে সক্ষম হতে পারে। তার চোখের রঙ এখনও পরিবর্তন হতে পারে।
  • মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র: শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা এখন আরও সুস্থভাবে চলতে শুরু করেছে। সে এখন তার হাত ও পা নেড়ে সাড়া দিতে পারে, এবং তার মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক সিগন্যাল তার স্নায়ুতন্ত্রে চলে যাচ্ছে।

গর্ভাবস্থার শারীরিক লক্ষণ

  • বাড়তি পরিমাণ ক্লান্তি: গর্ভাবস্থার এই পর্যায়ে আপনি অধিক ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। শরীরের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে বিশ্রাম এবং ঘুমের প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পাবে। এটা একেবারেই প্রাকৃতিক এবং আপনার শরীরের তাড়না অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • ব্র্যাকটিক্স হিক্স কনট্রাকশন: এই সময়ে অনেক নারী সামান্য ব্র্যাকটিক্স হিক্স কনট্রাকশন অনুভব করেন, যা গর্ভাশয়ের অনুশীলন বা প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে। তবে, যদি এ ধরণের কনট্রাকশন খুব বেশি হয় বা প্রচণ্ড ব্যথা হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ফোলাভাব: এই সপ্তাহে পায়ের ফোলাভাব, হাত বা মুখে ফোলাভাব বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত পানি পান করা এবং পা উঁচু করে বিশ্রাম নেওয়া সহায়ক হতে পারে।
  • মূত্রাশয়ের চাপ: গর্ভাশয় বড় হয়ে যাওয়ার কারণে মূত্রাশয়ে চাপ পড়ছে, এবং অতিরিক্ত প্রস্রাবের প্রয়োজন অনুভব হতে পারে। রাতে ঘুমানোর সময় বারবার প্রস্রাবের জন্য উঠতে হতে পারে।

আপনার এবং শিশুর জন্য করণীয়

  1. বিশ্রাম নিন এবং শারীরিক চাপ কমান:
    • গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শরীরের চাপ কমানোর জন্য হালকা স্ট্রেচিং এবং যোগব্যায়াম করতে পারেন, তবে খুব ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন। কিছুক্ষণ পায়ের নিচে বালিশ রেখে শুয়ে থাকুন, যা পায়ের ফোলাভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  2. স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি মনোযোগ দিন:
    • ক্যালসিয়াম, আয়রন, প্রোটিন, এবং ভিটামিন ডি শাকসবজি, মাছ, দুধ, মাংস, ডিম এবং ফলমূল থেকে গ্রহণ করতে পারেন। শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির জন্য প্রচুর পরিমাণে জল ও স্ন্যাকস খাবার হিসাবে খেতে ভুলবেন না।
  3. নিরাপদ গর্ভাবস্থা প্রস্তুতি:
    • সন্তানের জন্মের জন্য আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে। শিশুর পোশাক, ডায়াপার, শিশুর খাবারের সরঞ্জাম, হাসপাতাল ব্যাগ প্রস্তুত রাখুন। এছাড়া, হাসপাতালের রুটিন এবং আপনির চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগের পরিকল্পনা তৈরি করুন।
  4. স্মৃতির ত্রুটি এবং চাপ দূর করুন:
    • গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে আপনার মন অস্থির থাকতে পারে, তবে উদ্বেগ এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। ধ্যান, সঙ্গীত শোনা, বই পড়া বা আরামদায়ক পরিবেশে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা

  • যদি আপনার রক্তপাত বা অস্বাভাবিক স্রাব দেখা দেয়।
  • যদি প্রচণ্ড পেট বা পিঠে ব্যথা অনুভব করেন।
  • যদি পায়ের ফোলাভাব, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন।
  • যদি গর্ভাবস্থার শেষের দিকে সন্তান জন্মের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার বিষয়ে আরও পরামর্শ দরকার।

এ সপ্তাহে আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ এবং পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। শুভকামনা এবং নিরাপদ প্রসবের জন্য প্রস্তুত থাকুন!